পশ্চিমবঙ্গে এ বছর ‘দেশনায়ক দিবস’ হিসেবে পালিত হবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মদিন। আর সেই উপলক্ষে বাংলা তথা ভারত ও সারা বিশ্বের বাঙালি ও নেতাজি–অনুরাগীদের কাছে তাঁর জন্মলগ্নে (বেলা ১২টা ১৫ মিনিট) শঙ্খ বাজানো বা উলুধ্বনি দিয়ে উদ্যাপন করার বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে সোমবার নবান্নে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে ২৩ জানুয়ারি ও সারা বছর নেতাজির জন্মবার্ষিকী কীভাবে পালন করা যেতে পারে তার নকশা এঁকে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
এ বছর ২৩ জানুয়ারি সরকারিভাবে কীভাবে নেতাজির জন্মজয়ন্তী উদ্যাপন করা হবে সে কথা বলতে গিয়ে এদিন মমতা বলেন, ‘ওই দিন আমরা ঠিক ১২টায় শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে জমায়েত হয়ে যাব। নেতাজির যে জন্ম সময় অর্থাৎ দুপুর ১২টা ১৫–তে সারা বাংলা জুড়ে সাইরেন বাজবে। সাইরেন বাজার সঙ্গে সঙ্গে মিছিল শুরু হবে। রেড রোডে নেতাজির মূর্তির পাদদেশে শেষ হবে মিছিল। পুলিশের ব্যান্ড থাকবে।’
সারা বাংলা তথা ভারতবর্ষ ও সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙালি ও ভারতীয়দের জন্য মমতার বার্তা, ‘বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে, নেতাজিকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে শঙ্খ বাজাবেন, উলুধ্বনি দেবেন। মুসলিমরা আজানের মতো কিছু একটা করতে পারেন। সব সম্প্রদায় মিলে এটা আমরা করব।’
এর পাশাপাশি নেতাজিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে একগুচ্ছ উদ্যোগের কথা এদিন ঘোষণা করেন মমতা। তিনি জানান, ‘নেতাজির নামে মনুমেন্ট করা হবে। সেটা রাজারহাটের দিকে হতে পারে। তার নাম হবে ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’ মনুমেন্ট।’ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নামে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় করার কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় আমরাই করব। কারও কাছে টাকা চাইব না, ভিক্ষা চাইব না।’
১৯৩৮ সালে প্ল্যানিং কমিশন গঠন করেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। সেই কথা মনে করিয়ে এবং কেন্দ্রের ‘নীতি আয়োগ’–এর কটাক্ষ করে এদিন মমতা ঘোষণা করেন, ‘আমরা বাংলা প্ল্যানিং কমিশন শুরু করব। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে কাজ করবে এই কমিশন। কেউ মানবে, কেউ মানবে না। তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।’
মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও জানান, ‘২৬ জানুয়ারির প্যারেডে নেতাজিকে উৎসর্গ করে থাকবে একটি বিশেষ ট্যাবলো। আজাদ হিন্দ ফৌজের নামে বিশেষ ব্যান্ডে করবে কলকাতা পুলিশ। ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের প্যারেড এবার সম্পূর্ণ উৎসর্গ করা হবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে।’ নেতাজিকে নিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি তৈরি করার কথা বলেছেন তিনি। নেতাজি ভবনে সেই তথ্যচিত্র দেখানো হবে।
নেতাজির জন্মবার্ষিকী পালনে শিশু ও যুব সম্প্রদায়কে কীভাবে আকৃষ্ট করা যেতে পারে তা নিয়েও এদিন আলোচনা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব, অলচিকী, পাহাড়ি–সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় নেতাজিকে নিয়ে বই প্রকাশ করা যেতে পারে। এদিন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ‘তরুণের স্বপ্ন’ বইটি সব ভাষায় অনুবাদ করার কথা বলেছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, রাজ্যের প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রের এনসিসি–র পাশাপাশি একই আদলে গড়া হবে ‘জয় হিন্দ বাহিনী’। নেতাজির ‘জয় হিন্দ বাহিনী’–র যে সব গান ছিল সেগুলি নিয়ে একটি গানের অ্যালবাম করারও প্রস্তাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই দায়িত্ব তিনি দিয়েছেন সুগত বসুকে।
উল্লেখ্য, এদিনের আলোচনাসভায় ছিলেন নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস, ফেলিক্স রাজ, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, সুগত বসু, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, ব্রাত্য বসু, যোগেন, শুভাপ্রসন্ন, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকার প্রমুখ।