আরজি কর মামলায় আদালতের তুমুল ভর্ৎসনার মুখে পড়লেন কলকাতা পুলিশের ইনস্পেক্টর রূপালি মুখোপাধ্যায়। সঞ্জয় রায়ের ফোন নিয়ে তিনি যেভাবে টালা থানায় ফেলে রেখে দিয়েছিলেন, তা নিয়ে চূড়ান্ত বিরক্তিপ্রকাশ করেছে শিয়ালদা আদালত। বিচারক অনির্বাণ দাসের মতে, সঞ্জয়ের ফোন নিয়ে তিনি যা যা করেছিলেন এবং সেটার স্বপক্ষে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সেটা অত্যন্ত দুর্বল। তাঁর ব্যাখ্যার কোনও যুক্তি খুঁজে পাননি বলে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন বিচারক। এমনকী তিনি বলেন, ‘তাঁর (কলকাতা পুলিশের ইনস্পেক্টর) ভাগ্য ভালো যে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন করে অভিযুক্তের আইনজীবী তাঁকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেননি। কিন্তু উনি ঠিকভাবে তদন্ত এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছেন।’
ইনস্পেক্টরের ‘ব্যর্থতার’ নমুনাও তুলে ধরেছে আদালত
আর কলকাতা পুলিশের ইনস্পেক্টরের সেই ‘ব্যর্থতার’ নমুনা আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ধর্ষণ ও খুনের মামলার রায়ের কপিতে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন বিচারক। রায়ের কপিতে তিনি বলেছেন, 'ইনস্পেক্টর রূপালি মুখোপাধ্যায় যে কাজ করেছেন, আমি সেটারও সমালোচনা করতে চাই। উনি মহিলা গ্রিভ্যান্স সেলের অ্যাডিশনাল ওসিও বটে। আর অবশ্যই উনি একজন সিনিয়র অফিসার। এটা অনুমান করা যায় যে (এরকম) ঘটনা সামলানোর ক্ষেত্রে তাঁর পর্যাপ্ত জ্ঞান আছে।'
‘এরকম কাজের কোনও যুক্তি পাইনি’, বলল আদালত
কিন্তু বাস্তবে সেটার পরিচয় পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন বিচারক। রায়ের কপিতে তিনি জানিয়েছেন, গত ৯ অগস্ট (যেদিন নির্যাতিতার দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল) সঞ্জয়ের থেকে ফোন নিয়ে টালা থানায় দায়সারাভাবে ফেলে রাখার বিষয়টি অত্যন্ত ‘অদ্ভুত’। খুব ‘অদ্ভুতভাবে’ তিনি অত্যন্ত দুর্বল যুক্তি দিয়ে দাবি করেছেন যে প্রাথমিকভাবে সঞ্জয়কে ফোন ফেরত দিয়েছিলেন। আর যখন (১০ অগস্ট) তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তখন সেই ফোনটাই বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া হয়েছিল। বিচারক বলেছেন, ‘ওই অফিসারের এরকম কাজের পিছনে আমি কোনও যুক্তি খুঁজে পাইনি।’
কোনও নির্দিষ্ট ‘মোটিভ’ ছিল?
যদিও কোনও নির্দিষ্ট ‘মোটিভ’ নিয়ে ওই অফিসার সেরকম কোনও কাজ করেছেন বলে আদালতের রায়ের কপিতে জানানো হয়নি। রায়ের কপিতে বিচারক বলেছেন, ‘যে তথ্যপ্রমাণ আছে, তা থেকে এটা প্রতিষ্ঠিত হয়নি যে কোনও গোপন উদ্দেশ্যে তিনি সেই কাজ করেছিলেন বা অভিযুক্তের মোবাইলের ডেটার বিকৃতি করেছিলেন তিনি।’
পুলিশের কাজে ক্ষুব্ধ আদালত
তবে শুধু কলকাতা পুলিশের একজন অফিসার নন, একাধিক পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে উষ্মাপ্রকাশ করেছে আদালত। বিচারকের আরও বিরক্তি বাড়িয়েছে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের সাক্ষ্য দেওয়ার ভঙ্গিমা। বিচারকের মতে, নিয়মবিরুদ্ধ কাজ করেও গর্বের সঙ্গে সেটা বয়ান রেকর্ডের সময় বলেছেন কলকাতা পুলিশের একাধিক অফিসার। সেই পরিস্থিতিতে পুলিশ কর্মী ও অফিসাররা যাতে এরকম কোনও নিয়মবিরুদ্ধ ও বেআইনি কাজ না করেন, সেটার বার্তা কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে দিয়েছে আদালত।
আর সেই বিষয়টি নিয়ে আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম 'মুখ' তথা সমাজকর্মী তুলিকা অধিকারী জানিয়েছেন, আদালতের রায়ের কপিতে পুলিশের কাজ নিয়ে যেসব প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সেটা অত্যন্ত ইতিবাচক বিষয়। কলকাতা পুলিশের কাজ নিয়ে প্রথম থেকেই একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। তাঁরাও প্রথম থেকেই বলে এসেছেন যে একাধিক গাফিলতি করেছে পুলিশ। আদালতও সেটাই বলল।