‘ফেল করলে ফেল করতাম, বুঝতাম যে আমার দোষ, কিন্তু এভাবে পরীক্ষা বাতিল হয়ে যাওয়ার বিষয়টি চরম হতাশাজনক’- UGC-NET বাতিল হয়ে যাওয়ায় চূড়ান্ত ক্ষোভে ফুঁসতে-ফুঁসতে বললেন UGC-NET পরীক্ষার এক প্রার্থী। ২০২২ সালে মিউজিওলজি নিয়ে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করার পরে ১৮ জুন প্রথমবার নেট পরীক্ষায় বসেছিলেন কলকাতার সিমোন সরকার। পরীক্ষাও মোটামুটি ভালো হয়েছিল। কাট-অফ কত হবে, প্রথমবারেই নেট ‘ক্র্যাক’ করতে পারবেন কিনা, সেইসব বিষয়গুলি নিয়ে যখন ভাবনাচিন্তা করছিলেন, সেইসময় জানতে পারেন যে পরীক্ষা বাতিল হয়ে গিয়েছে।
‘হতাশার থেকে বেশি রাগ ধরছে’
তারপর ক্ষোভে ফুঁসতে-ফুঁসতে ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা’-কে সিমোন বলেন, ‘বাজে নম্বর এলে আসত। নিদেনপক্ষে এটা বুঝতাম যে হ্যাঁ, ভালোভাবে পড়িনি। এটা আমারই দোষ। কিন্তু এরকমভাবে পরীক্ষা বাতিল হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা চূড়ান্ত হতাশাজনক। তবে হতাশার থেকে বেশি রাগ ধরছে। এটা কী হচ্ছে! একদিন পরীক্ষা দিচ্ছি। পরদিন জানতে পারছি যে পরীক্ষা বাতিল হয়ে যাচ্ছে।’
তবে শুধু সিমোন নন, ক্ষোভে ফুঁসছেন ইউজিসি-নেট দেওয়া অন্যান্য প্রার্থীরাও। তাঁদের বক্তব্য, স্বপ্নপূরণের জন্য নিজেদের সবকিছু উজাড় করে দিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তাঁরা। আর তারপর যখন শুনতে হয় যে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ার জন্য পরীক্ষা বাতিল হয়ে গিয়েছে, তখন একরাশ হতাশা গ্রাস করে ফেলে। মনে জন্মায় রাগ। সেই রাগ নিয়েই প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তনী বলেন, 'রাজ্য সরকারের নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতি হচ্ছে। ইউজিসি-নেট পরীক্ষা বাতিল হয়ে যাচ্ছে। আমরা তাহলে করবটা কী?'
'NET-র জন্য চাকরি ছেড়ে দিই'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রার্থী বলেন, ‘বাংলার স্নাতকোত্তর স্তরের ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার পরেই আমি একটি জায়গায় চাকরিতে যোগ দিয়েছিলাম। তখনও রেজাল্ট বের হয়নি। পরে ওই চাকরিটা ছেড়ে দিই। যেহেতু আমি পিএইচডি করে পড়াশোনার জগতেই থাকতে চাই, তাই সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আর নেটের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তারপর খাটাখাটনি করে পরীক্ষা দিলাম। কিন্তু এখন পুরোটা ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়ে গেল।’
সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের চাকরির বাজারের যা অবস্থা, তাতে এরকম একটা পরীক্ষা বাতিল হয়ে যাওয়ার বিষয়টি কোনওভাবে মেনে নেওয়া যায় না। একবার পরীক্ষা বাতিল হয়ে যাওয়ার পরে কবে ফের সেই পরীক্ষা নেওয়া হবে, তার কোনও ঠিক-ঠিকানা নেই। ভীষণভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেলাম। এতদিন ধরে পড়াশোনা করে, প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিলাম। কিন্তু এখন জানি না যে কী করব।’
প্রার্থীদের আশ্বাস কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর
যদিও কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান আশ্বাস দিয়েছেন যে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ করা হবে। পড়ুয়াদের সঙ্গে যাতে কোনওরকম অবিচার না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে নরেন্দ্র মোদী সরকার বদ্ধপরিকর বলে দাবি করেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী। সেইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, নেটের প্রশ্নপত্র ডার্কনেটে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।