পরিকল্পিতভাবেই রাজ্যের মন্ত্রী জাকির হোসেনের উপর হামলা চালানো হয়েছে। এমনই দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে রাজ্যের আইন-শৃ্ঙ্খলার অবনতি নিয়ে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা খারিজ করে ঘটনার পুরো দায়ভার রেলের উপর চাপিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা নাগাদ রাজ্যের শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রীকে দেখতে এসএসকেএমে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে জাকিরের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। কথা বলেন স্ত্রী, ভাগ্নে-সহ পরিবারের লোকজনের সঙ্গে। পরে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মমতা জানান, জাকিরের এখনও অস্ত্রোপচার চলছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা ‘খুবই খারাপ’। সকালে হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ অত্যন্ত কমে গিয়েছিল। পাশাপাশি এসএসকেএমে আরও ১০ জন আহতের চিকিৎসকরা চলছে। আরও চারজনকে মুর্শিদাবাদ থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে। মোটামুটি ২৬ জনের মতো আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে। প্রকৃত সংখ্যাটা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। মমতা বলেন, ‘ওকে (জাকির) খুব সিরিয়াস অবস্থায় অস্ত্রোপচারের জন্য পাঠানো হয়েছে। আর কয়েকজন রোগীকে তো দেখা যাচ্ছে না। আমি কোনওরকম দূর দূর থেকে দেখেছি।’ একইসঙ্গে তিনি জানান, আহতরা সুস্থ হয়ে গেলে বনহুগলি থেকে কৃত্রিম অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যবস্থা করবে রাজ্য সরকার। যাঁরা গুরুতর আহত হয়েছেন, তাঁদের পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক সাহায্য করা হবে। যাঁদের আঘাতের মাত্রা কম, তাঁদের এক লাখ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বুধবার রাত ৯ টা ৪৫ মিনিট নাগাদ মুর্শিদাবাদের নিমতিতা স্টেশনের দু'নম্বর প্ল্যাটফর্মে মন্ত্রীর উপর বোমা হামলা চালায় অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা। সেই ঘটনাকে ‘ভয়াবহ’ হিসেবে চিহ্নিত করে মমতা জানান, জাকিরের ভাগ্নে দাবি করেছেন যে রিমোটের মাধ্যমের বিস্ফোরণ ঘটনা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, 'ওর সঙ্গে যে ছেলেটা ছিল, ওর ভাগ্নে বলছে যে দিদি আমরা সবসময় যাই, ওরা বলছে যেটা, আমি জানি না। পুলিশ তদন্ত করে বের করবে। ওদের রিপোর্ট হচ্ছে যে রিমোটে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। স্টেশনে পা দিয়ে হাঁটার সময় বিস্ফোরণ করা হয়েছে। জেনেশুনেই করা হয়েছে।' সঙ্গে যোগ করেন, বিস্ফোরণের তীব্রতায় শিউরে উঠছেন তিনি। পঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিয়ন্ত সিংয়ের মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গেও তুলনা করেন। তবে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষের আগে চূড়ান্তভাবে কিছু জানাচ্ছেন না বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
রেলের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘এটা রেল স্টেশনে হয়েছে, সেই সময় রেলের নাকি কোনও পুলিশ-টুলিশ কেউ ছিলেন না। সেই সময় জায়গাটা অন্ধকার ছিল। মানে আলোও ছিল না। পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ (দেখে মনে হচ্ছে)। রেল স্টেশনের মানে সেটা রেলের অধীনে। এটা রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার বিষয় নয়। পুলিশকে রেল ডাকলে রাজ্য এফআইআর করতে পারে। আমি জানি না, এত বড় ঘটনার পর রেল কীভাবে বিষয়টি এত ক্যাজুয়ালি নিচ্ছে। এটা বড়সড় ষড়যন্ত্র। আমরা চাই যে সত্যিটা বেরিয়ে আসুক।’
পাশাপাশি রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলকে নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রীতিমতো ক্ষুব্ধ হন মমতা। তিনি বলেন, 'দেখুন রেল মিনিস্টার বলে দিয়ে খালাস হয়ে গেলেন। আমার একটা মিনিস্টার-সহ ২৬ জন সাধারণ মানুষ আজ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। রেল মিনিস্টার কী জানেন, তাঁদের হাত উড়ে গিয়েছে, তাঁদের পা উড়ে গিয়েছে, তাঁদের মুখ ঝলসে গিয়েছে। তাঁদের কী অবস্থা, একবারও ভেবে দেখেছেন। তাঁর স্টেশনে কী হচ্ছিল। এটা পুরোপুরি তাদের দায়িত্ব। টোটাল কেন্দ্রীয় সরকারের পুরো দায়িত্ব।' সঙ্গে যোগ করেন, ‘তাঁকে খুন করার গেমপ্ল্যান এটা।’
তবে তৃণমূলের যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে এই হামলার অভিযোগ উঠছিল, সে বিষয় নিয়ে মুখ খোলেননি তিনি। বরং তৃণমূল নেতাদের নিশানা করা হচ্ছে সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘টার্গেট তো করা হচ্ছে। গণতন্ত্রে লড়াইটা জরুরি। গণতন্ত্রে টার্গেট করে কেন খুন করবে? এটা গুন্ডাগিরি, এটা রাজনীতি নয়।’