করোনাসংক্রমণ মোকাবিলায় নবান্নে কলকাতার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে একযোগে কাজ করার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘এটা ব্যবসা করার সময় নয়। একযোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সময়।’
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় নবান্ন সভাঘরে আয়োজিত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। সঙ্গে অন্য হাসপাতালগুলিকে করোনা মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়তে নির্দেশ দেন তিনি।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের জন্য শয্যার সংখ্যা ২২ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করা হয়েছে। বাঙুর হাসপাতালে এজন্য ১৫০টি শয্যা তৈরি করা হয়েছে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ৫০ শয্যার কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। নবনির্মিত নাইট শেল্টারে তৈরি হবে এই কেন্দ্র।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। সামনের ২-৩ সপ্তাহ সাবধান থাকলেই বিপদ এড়ানো যাবে।’ সঙ্গে চিকিৎসকদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, বিদেশ থেকে নিজে বা পরিবারের কেউ ফিরলে রোগী দেখবেন না, গৃহবন্দি থাকুন।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ৩০০ ভেন্টিলেটরের বরাত দিয়েছে রাজ্য সরকার। তার মধ্যে ৭০টি ভেন্টিলেটর হাতে পেয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। সেগুলি সরকারি হাসপাতালগুলির মধ্যে বিতরণ করা হবে। সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকেও ভেন্টিলেটরের সংখ্যা বাড়াতে অনুরোধ করেন তিনি। বলেন, এব্যাপারে চাইলে রাজ্য সরকার তাদের সাহায্য করতে পারেন।
একই সঙ্গে একমো মেশিনের সংখ্যাও রাজ্য সরকার বাড়াচ্ছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। বর্তমানে SSKM হাসপাতালে রয়েছে ২টি একমো মেশিন। আরও ১০টি মেশিনের অর্ডার দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। বেসরকারি হাসপাতালগুলিকেও এই মেসিন কিনতে অনুরোধ করেন তিনি। এমনকী মেশিনের কার্যকারিতা বুঝিয়ে বলেন বৈঠকে উপস্থিত বিভিন্ন হাসপাতালের সুপার ও প্রিন্সিপ্যালদের।
এছাড়া রাজ্য সরকার ২ লক্ষ মাস্কের বরাত দিয়েছে বলে জানান মমতা। সঙ্গে ৩০,০০০ গ্লাভস ও ১০,০০০ থার্মাল গানের অর্ডার দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার ২ লক্ষ PPE বা ভাইরাস নিরোধী পোশাকের বরাত দিয়েছে। সংক্রমণ রুখতে এই পোশাক পরে থাকেন ডাক্তার ও চিকিৎসা কর্মীরা। সেই পোশাক হাতে পেলে তা বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যেও বিতরণ করতে বলেন তিনি।
এদিনের বৈঠকে বিভিন্ন হাসপাতালের পক্ষ থেকে মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশিকা দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করা হয়। তবে তিনি জানিয়েছেন, মাস্ক কেউ চাইলে তাকে দিতেই হবে। সেক্ষেত্রে মাস্কের ঘাটতি পড়লে মাস্ক কিনতে যত টাকা লাগে দেবে সরকার।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় এদিন বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে তৈরি থাকার নির্দেশ দেন মমতা। বলেন, সঙ্কটের সময় সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে।
এদিনের বৈঠকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের ভূয়সী প্রশংসা করেন মমতা। হাসপাতালের তরফে বৈঠকে উপস্থিত প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, হাসপাতালের প্রত্যেক চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মীদের আমার শুভেচ্ছা পৌঁছে দেবেন।