এক বৃদ্ধার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৭ লক্ষ টাকা সাফ করে দেওয়া হল বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এই কাজ করার অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করেছে ওই ব্যাঙ্কের ডেপুটি ম্যানেজারকে। আর তাতেই জোর শোরগোল পড়ে গিয়েছে। কেন ব্যাঙ্কের কর্তা গ্রেফতার? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বহুদিন লেনদেন হয়নি। সেটা নজরে পড়ে ওই ব্যাঙ্ক কর্তার। তখনই সেখান থেকে টাকা হাপিস করার ছক কষা হয় বলে অভিযোগ। আর সেটাই সামনে চলে আসায় বুধবার অভিযুক্ত ডেপুটি ম্যানেজার সুমন সিংকে গ্রেফতার করল দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুর থানার পুলিশ অফিসাররা।
এদিকে মানুষ নিজের সঞ্চয় ব্যাঙ্কে রাখাকেই আজও নিরাপদ বলে মনে করেন। অথচ মানুষের টাকাই ব্যাঙ্ক কর্তা হাতিয়ে নেবেন এটা কল্পনার অতীত ছিল। সেখানে স্টেট ব্যাঙ্কের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় এক বৃদ্ধার সই রীতিমতো নকল করে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে ১৭ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আর এই গোটা টাকা সরানোর চক্রান্তে ডেপুটি ব্রাঞ্চ ম্যানেজার সুমন কুমার সিং জড়িত প্রকাশ্যে আসায় ব্যাঙ্কে টাকা রাখা কতটা নিরাপদ তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। গত ২৩ জানুয়ারি সন্তরণী ঘোষ নামে ৮২ বছরের বৃদ্ধা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, তাঁর সই নকল করে অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ১৭ লক্ষ টাকা। থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে তিনি জানান, এই কাজ করা হয়েছে তাঁর বিনা অনুমতিতে।
আরও পড়ুন: আবার পিছিয়ে গেল কালীঘাটের কাকুর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের কাজ, গরহাজির আদালতে
অন্যদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় টাকা রাখেন ওই বৃদ্ধা। অনেকদিন ব্যাঙ্কের টাকার লেনদেন হয়নি। দু’দিন আগে ওই ব্যাঙ্কে গিয়ে ঠাকুরমার অ্যাকাউন্ট আপডেট করতে যান নাতি। কিন্তু আপডেট করার পরই দেখতে পান, গত কয়েক মাসে তুলে নেওয়া হয়েছে ১৭ লক্ষ টাকা। ওই অ্যাকাউন্টে কেওয়াইসিতে মোবাইল নম্বর না থাকায় পরিবারের সদস্যরা কিছু জানতে পারেননি। তাই ওই বৃদ্ধা যাদবপুর থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত করে জানতে পারে, ব্যাঙ্কের উইড্রস স্লিপ দিয়েই টাকা তোলা হয়। স্লিপে রয়েছে বৃদ্ধার সইও।
এছাড়া পুলিশ তদন্তে নেমে ওই ব্যাঙ্ককে নোটিশ দেয়। ওই বৃদ্ধার অ্যাকাউন্টের যাবতীয় নথি ও তথ্য ব্যাঙ্ক থেকে সংগ্রহ করা হয়। আর সেগুলি খতিয়ে দেখে তদন্তকারীরা জানান, ডেপুটি ব্রাঞ্চ ম্যানেজার সরাসরি এই অর্থ গায়েবের কাজে যুক্ত। আর বৃদ্ধার সই জাল করা হয়েছে। এই প্রমাণ হাতে পাওয়ার পর টানা জেরা করা হয় ব্যাঙ্ক কর্তাকে। আর তাতেই ভেঙে পড়েন সুমন কুমার সিং। পুলিশের অভিযোগ, সুমন সিং ওই অ্যাকাউন্ট থেকে স্লিপ দিয়ে টাকা তুলে নেন। ওই টাকা সুমন আত্মীয়দের অ্যাকাউন্ট এবং নিজের জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে রেখে নিশ্চিন্ত হন। ভেবেছিলেন ওই বৃদ্ধা মারা গিয়েছে। আর উত্তরসূরি কেউ নেই। সুমন কুমার সিংয়ের বাড়ি হুগলি জেলার কোন্নগর এলাকায়। এখন তাঁকে গ্রেফতার করে ওই টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।