যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কদিন আগে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর উপর হামলা হয়। আবার এক ছাত্রও শিক্ষামন্ত্রীর গাড়িতে আঘাত পায় বলে অভিযোগ। এই নিয়ে গোটা রাজ্য তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল। আর তাই এবার এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ ফাঁড়ি তৈরি করার প্রস্তাব দেওয়া হল। লালবাজার থেকে চিঠি এবার এসে গেল বিশ্ববিদ্য়ালয়ের কর্তৃপক্ষের দুয়ারে। মঙ্গলবার রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে এই মর্মে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে পরিষ্কার করে পুলিশ আউটপোস্ট বা ফাঁড়ি তৈরির করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকী একসপ্তাহের মধ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে মতামত জানাতে বলা হয়েছে। সুতরাং এখন যা পরিস্থিতি তাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্মতি দিলেই গড়ে উঠবে আউটপোস্ট। আউটপোস্টের অর্থ, যেখানে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ থাকে।
এখানে যাদবপুর থানা থেকে পুলিশ ফাঁড়ি পরিচালনা করা হবে বলে লালবাজার সূত্রে খবর। লালবাজারের পাঠানো ওই চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে এই নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে এই চিঠি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্দরের শৃঙ্খলারক্ষার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষেরই। সেখানে পুলিশ প্রবেশ করতে পারে কি? আউটপোস্ট বা ফাঁড়ি হতে পারে ক্যাম্পাসে? এই সব প্রশ্ন এখন উঠতে শুরু করেছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার অশান্তি এবং নানা অভিযোগ উঠেছে। দু’বছর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল থেকে বাংলার প্রথম বর্ষের ছাত্র তিনতলা থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল। র্যাগিংয়ের জেরেই এই মৃত্যু হয়েছিল বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: ভু্য়ো আইএএস অফিসার পরিচয় দিয়ে নীলবাতি ব্যবহার, গ্রেফতার অধীরের প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক
তারপর আবার এই বছর সরাসরি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর উপর হামলা হল। শুধু তাই নয়, একাধিক অধ্যাপক প্রহৃত হয়েছেন বলে অভিযোগ। অসুস্থ হযে পড়েন খোদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ ফাঁড়ি বা আউট পোস্ট হতেই পারে বলে পুলিশ মনে করছে। কারণ সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব পুলিশেরই। কদিন আগেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাদা পোশাকে পুলিশ ঢোকা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক দানা বাঁধে। এখন আবার ক্যাম্পাসে পুলিশ আউটপোস্ট করতে চাইছে লালবাজার। সুতরাং টানটান স্নায়ুর লড়াই তৈরি হয়েছে। পুলিশ প্রবেশ করলে বাম–অতিবামদের রমরমা কমবে বলে অনেকের মত।
এছাড়া যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়ালে ‘আজাদ কাশ্মীর’, ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’–এর মতো স্লোগান লেখা হয়েছে। তাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দেশদ্রোহের মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেশ বিরোধী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বলে আশঙ্কা করছেন পুলিশ কর্তারা। তাই সরকারি হাসপাতালগুলিতে যেমন পুলিশ আউটপোস্ট থাকে তেমন ২৪ ঘণ্টা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের আউটপোস্টে পুলিশ থাকবে বলে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যনির্বাহী রেজিস্ট্রার ডঃ ইন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা কলকাতা পুলিশের ইমেল পেয়েছি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে আউটপোস্ট করার জন্য জায়গা চেয়েছে। সবপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করতে হবে।’