রাজ্যের বিরোধী দলনেতার ভাইয়ের আইনজীবীর তরফ থেকে আইনি নোটিশ পেয়ে তড়িঘড়ি নিজের ফেসবুক পোস্ট মুছলেন বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে যাঁর আইনজীবী তাঁকে ওই আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন, সেই দিব্যেন্দু অধিকারীও বর্তমানে বিজেপিরই সদস্য।
ঘটনার সূত্রপাত প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই-এর হাতে আসা তালিকাকে ঘিরে। দাবি করা হচ্ছে, তাদের হাতে ৩২৪ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার নামের একটি তালিকা এসেছে। অভিযোগ হল, এঁরা কেউই যোগ্য প্রার্থী নন। চাকরি হাসিল করেছেন কোনও রাজনৈতিক নেতানেত্রী অথবা কোনও প্রভাবশালীর সুপারিশের মাধ্যমে। অভিযোগ, এই ৩২৪ জনের মধ্যে ১১ জনের চাকরি পাওয়ার পিছনে নাকি দিব্যেন্দু অধিকারীর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে!
ইতিমধ্যেই এই তালিকাটি সংবাদমাধ্যম এবং সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। সেই তালিকা নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করেছিলে জগন্নানাথও। সঙ্গে লিখেছিলেন, 'এসএসসি নিয়োগ। যোগ্যরা রাস্তায়, অযোগ্যরা সুপারিশে। সেটিং সেটিং বলে যাঁরা চিৎকার করেন তাঁরাই বলুন।'
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেটের পরে নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়েছিল ২০১৬ সালে। জগন্নাথ পোস্টের শেষে লিখেছিলেন, '২০১৬ সাল। সকলেই তৃণমূলী সম্পদ। কেউ ছাড় পাবেন না। সময় লাগতে পারে।'
প্রসঙ্গত, প্রাক্তন তৃণমূলী দিব্যেন্দু আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপি যোগ দেন ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে। আর, এই তালিকায় দিব্যেন্দু ছাড়াও ভারতী ঘোষ, মমতাবালা ঠাকুর, শওকত মোল্লাদের মতো একাধিক রাজনৈতিক নেতানেত্রীর নাম রয়েছে। ঘটনা ঘটার সময় এঁরা সকলেই তৃণমূলে ছিলেন। এখনও এঁদের অনেকেই তৃণমূলের সদস্য।
কিন্তু, শুক্রবার জগন্নাথ তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে ওই তালিকা পোস্ট করার পরই শনিবার তাঁর কাছে ইমেল মারফত আইনি নোটিশ পাঠান দিব্যেন্দুর আইনজীবী। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, ওই নোটিশে জগন্নাথকে জানানো হয়, নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট মামলাটির এখনও তদন্ত চলছে। কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা সেই তদন্ত করছে। এই প্রেক্ষাপটে এই ধরনের পোস্ট তাঁর মক্কেলের (দিব্যেন্দু অধিকারী) জন্য অসম্মানজনক।
ওই নোটিশে স্পষ্ট লেখা হয়, দু'ঘণ্টার মধ্যে জগন্নাথ যদি পোস্টটি না অ্যাকাউন্ট থেকে না মোছেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনত পদক্ষেপ করা হবে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই পোস্ট বিজেপি নেতার অ্যাকাউন্ট থেকে উবে যায়। সূত্রের দাবি, তিনি নিজেই নাকি ওই পোস্ট মুছে দিয়েছেন।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, বিষয়টি নিয়ে বিজেপির অন্দরে শোরগোল শুরু হলেও জগন্নাথ নিজে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জুন মাসে বিকাশ ভবনের ওয়্যারহাউসে অভিযান চালিয়েছিল সিবিআই। সেই তল্লাশি অভিযানের সময়েই নাকি সংশ্লিষ্ট তালিকা বা নথিটি সিবিআই-এর হাতে আসে। অভিযোগ, বিভিন্ন প্রভাবশালীরা বেআইনি নিয়োগের যে সুপারিশ প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়কে পাঠিয়েছিলেন, ওই নথি বা তালিকা তারই প্রমাণ।