দিল্লিতে যাওয়ার ঘোষিত কর্মসূচি ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাৎ। সেই সাক্ষাৎ হয়েছে বটে। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে আচমকাই বিজেপি নেতার বাড়িতে চলে গেলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। আর এই ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বিতর্কের নিয়ে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে। দিল্লিতে পৌঁছে প্রথমেই অমিতের বাড়িতে গিয়েছিলেন ধনখড়। কিন্তু তখন অমিতের দেখা পাননি তিনি। সেখান থেকে বেরিয়ে ধনখড় সটান হাজির হন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষের বাড়িতে। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে আবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাড়িতে যান বাংলার রাজ্যপাল। সেই সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে রাজ্য প্রশাসনকে তুলোধনা করেন তিনি। কিন্তু ততক্ষণে বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে।
বিভিন্ন বিষয়ে সরাসরি ক্ষমা চাইতে বলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকেও! যার সূত্রে তাঁর চূড়ান্ত বিরোধিতা করতে শুরু করেছে তৃণমূল। আর শাসক শিবিরের অভিযোগ, ধনখড় সরাসরি বিজেপির হয়ে কাজ করছেন। এমনকী কখনও পদ্মপাল, অপমানিতপাল, বিবৃতিপাল বলে তাঁকে আক্রমণ করা হয়েছে। এই কারণেই ধনখড়কে রাজ্যপালের পদ থেকে সরানোর আর্জি জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠিও লিখেছে তারা। সেই আবহেই খনখড় দিল্লিতে বাড়ি বয়ে গিয়ে সন্তোষের সঙ্গে দেখা করে নিজের বাড়িতে অসন্তোষ ডেকে এনেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।। প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যপালের মতো একটি ‘অরাজনৈতিক’ পদে থেকে কোনও রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতার সঙ্গে কীভাবে দেখা করেন তিনি! রাজ্যপাল অবশ্য যথারীতি ওই সাক্ষাৎকারকে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ বলেই বর্ণনা করেছেন।
অমিতের সঙ্গে সাক্ষাতের শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যপাল জানান, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের নানা উদ্বেগজনক ঘটনা সম্পর্কে শাহকে জানিয়েছেন। তিনি একেবারেই কোনও রাজনৈতিক দল–ঘেঁষা নন। বরং রাজ্যের নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা এবং রাজ্যবাসীর নানাবিধ সমস্যা নিয়েই উদ্বিগ্ন তিনি। দিল্লিতে বসে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে আক্রমণ করে ধনখড় বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের নিরাপত্তা বিপদের মুখে। আল কায়দা ক্রমশই সেখানে জাল বিস্তার করছে। বোমা বাঁধা, বেআইনি কাজকর্মের ঘটনা বেড়েই চলেছে। আমি জানতে চাই, রাজ্য প্রশাসন কী করছে। পশ্চিমবঙ্গে ডিজিপির অবস্থান ঠিক কী, তা আর কারও জানতে বাকি নেই। বাংলার পুলিশ রাজনীতিবিদদের দলদাসে পরিণত হয়েছে। নির্বাচনী হিংসা এবং ভোটাধিকার লঙ্ঘনের জন্যই পশ্চিমবঙ্গ পরিচিত। ২০২১ পশ্চিমবঙ্গের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। নিজেদের ভাবমূর্তি শোধরানোর এটাই একটা বড় সুযোগ।’
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে বাংলার দায়িত্বে আসার পর থেকেই নানা বিষয়ে মমতার সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন রাজ্যপাল। বারবার অভিযোগ করেছেন, তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের আমলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। শাসক দলের অভিযোগ, রাজ্যপাল নিজের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে প্রশাসনিক কাজে নাক গলাচ্ছেন। গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে রাজ্যপালের দহরম মহরমের কথা মাথায় রেখে রাজভবন ক্রমশ বিজেপির পার্টি অফিসে পরিণত হচ্ছে। সন্তোষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সেই বিতর্কেই আরও উস্কে দিলেন ধনখড়।
এই ধনখড়–সন্তোষ ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ শনিবার বলেন, ‘আসলে উনি তো নিজে একজন রাজনৈতিক নেতা। ওঁর আচরণ যখন বিজেপি নেতাদের মতো, তখন উনি গিয়ে বিজেপি নেতাদের সঙ্গেই দেখা করবেন। সেটাই তো স্বাভাবিক!’