নরেন্দ্র মোদীর কথাও কি মানছেন না বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী? প্রধানমন্ত্রীর কথাও অবজ্ঞা করছেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা? তাঁর একটি বক্তব্যের পরে এমনই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ মোদী যখন ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’-র স্লোগান তুলে আসছেন, তখন শুভেন্দু সেই স্লোগান পালটে দিলেন। ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’-র পরিবর্তে ‘জো হামারা সাথ, হাম উনকা সাথ’-র স্লোগান তুললেন। সেইসঙ্গে সংখ্যালঘু মোর্চা বন্ধ করে দেওয়ার নিদানও দিলেন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক তথা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা। যদিও পরে নিজের মন্তব্য নিয়ে সাফাই দিয়েছেন তিনি।
মোদীর স্লোগানই বদলে দিলেন শুভেন্দু
বুধবার কলকাতার সায়েন্স সিটিতে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির বর্ধিত প্রদেশ কার্যকারিণী বৈঠকে শুভেন্দু বলেন, ‘আজ জিতব। হিন্দু বাঁচাব। সংবিধান বাঁচাব। আর বলব.....। আমিও বলেছি, আমিও বলেছি, রাষ্ট্রবাদী মুসলিম। আপনারাও বলেছেন, সবকা সাথ সবকা বিকাশ। আর বলব না। বলব, জো হামারা সাথ, হাম উনকা সাথ। জো হামারি সাথ, জো হামারি সাথ, হাম উনকা সাথ। সবকা সাথ, সবকা বিকাশ বনধ কর। সংখ্যালঘু মোর্চার কোনও দরকার নেই।’
শুভেন্দু যে ‘জো হামারা সাথ, হাম উনকা সাথ’-র স্লোগান তুলেছেন, তা বিজেপির ঘোষিত নীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। মোদীর আমলে বিজেপি বরাবরই ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’-র স্লোগান তুলে এসেছে। মোদী নিজে প্রায় সব জায়গায় সেই ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’-র স্লোগান তোলেন। কিন্তু মোদীর সেই স্লোগানই পালটে দেন শুভেন্দু। আর তিনি যখন মোদীরও উলটো কথা বলেন, তখন সেই সায়েন্স সিটিতে বসেছিলেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি সেলের প্রধান অমিত মালব্যরা।
পুরোপুরি ধর্মীয় মেরুকরণের তাস খেলেন শুভেন্দু
রাজনৈতিক মহলের মতে, শুভেন্দুর ইঙ্গিতটা স্পষ্ট ছিল। তিনি ধর্মীয় মেরুকরণের তাস খেলছিলেন। যে তাসটা বুধবার নিজের ভাষণের প্রায় পুরো সময়টাই ব্যবহার করেন শুভেন্দু। বাসন্তী এক্সপ্রেসওয়েকে ‘ইসলামাবাদ’ বলে দেন। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ছাব্বিশে আমায় ভোট দিতে দেবে না। আমি আপনাকে বলছি। তার কারণ আমি হিন্দু। আমার বাড়ির সামনে ৫০ জন জেহাদি ভোটের দিন বসে থাকবে।’
লোকসভা ভোটের ব্যর্থতার দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা
ধর্মীয় মেরুকরণের তাস খেলার মধ্যেই লোকসভা নির্বাচনে যে রাজ্যে বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে, তা নিয়ে দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করেন শুভেন্দু। বিজেপি নেতা দাবি করেন যে বিজেপির সংগঠনের দায়িত্বে তো তিনি নেই। তাঁর কথায়, ‘আপনি লক্ষ্য করবেন, বিরোধী দলনেতা আমি। আমি সংগঠনের দায়িত্বে নেই (জোর দিয়ে)।’
নিজের মন্তব্য নিয়ে সাফাই শুভেন্দুর
শুভেন্দু দাবি করেন, ‘প্রসঙ্গ না বুঝেই আমার মন্তব্য হইচই করা হচ্ছে। আমি একেবারে স্পষ্ট করে বলেছি যে যাঁরা জাতীয়দাবাদী, যাঁরা এই দেশ এবং বাংলার পক্ষে, তাঁদের সঙ্গে থাকা উচিত আমাদের। যাঁরা আমাদের সঙ্গে নেই, যাঁরা দেশ এবং বাংলার স্বার্থবিরোধী কাজ করেন, তাঁদের স্বরূপ ফাঁস করে দেওয়া উচিত আমাদের। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘুদের বিভাজন করা উচিত নয়। ’