কোভিড অতিমারির রেশ সদ্য কেটেছিল। সেই সময় পুরী ঘুরতে যাওয়ার জন্য অনলাইনে হোটেল বুকিং করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন বিচার বিভাগীয় বিচারক। তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে খোয়া গিয়েছিল প্রায় ৯২ হাজার টাকা। অবশেষে সেই সংক্রান্ত মামলায় দোষী সাব্যস্ত হল এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত দুজন। ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় তাদের দোষী সাব্যস্ত করেছে বিধান নগর আদালত। আজ তাদের সাজা ঘোষণা করা হবে।
আরও পড়ুন: 'ভোটে জিতে ২৩৯ টাকার রিচার্জের সুযোগ দিচ্ছেন মমতা', সেই লিঙ্কে ক্লিক করলেই বিপদ
কী ঘটেছিল?
সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২২ সালের অক্টোবরে। বিচারক সৌম্যশুভ্র ঘোষাল সপরিবারে পুরী ঘুরতে যাওয়ার জন্য অনলাইনে ওয়েবসাইট সার্চ করেন। তখন তিনি একটি ভুয়ো ওয়েবসাইটের পাল্লায় পড়েন। ওই ওয়েবসাইট থেকে একটি হোটেল বুক করেন। তখন তার কাছ থেকে কিছু টাকা কেটে নেওয়া হয়। পরবর্তীকালে আরও কিছু টাকা নেওয়া হয়। সবমিলিয়ে তিনি ৯২ হাজার টাকা তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা। তখন তিনি বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরপর সংশ্লিষ্ট হোটেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন তিনি জানতে পারেন কোনও বুকিং হয়নি। এরপরেই প্রতারণা বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন।
সেই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে ওই হোটেলের নামে ভুয়ো ওয়েবসাইট তৈরি করে এই প্রতারণা চক্র চালানো হচ্ছিল। এরপরই টাকা কোন অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে সেই সূত্র ধরে রাজস্থানের ভরতপুর এলাকায় হানা দেয় পুলিশ। সেখান থেকেই এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত প্রেম চাঁদকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে তাকে কলকাতায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরামবাগ থেকে আরও এক প্রতারক স্বর্ণদীপ রায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আইনজীবী জানান, এক্ষেত্রে বাংলার প্রতারকরা রাজস্থানের ভরতপুর গ্যাংয়ের সঙ্গে মিলিতভাবে এই প্রতারণা চক্র চালাচ্ছিল। পুলিশ জানতে পারে, স্বর্ণদীপ এক সাধারণ ব্যক্তিকে প্রলোভন দেখিয়ে তার নামে সিম কার্ড ইস্যু করেছিল। আর সেই নম্বর ওয়েবসাইটের গুগল অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
এদিকে, প্রতারকরা জামিনের আবেদন জানিয়ে প্রথমে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানায়। কিন্তু, কলকাতা হাইকোর্ট তাদের জামিন নাকচ করে দেয়। সেক্ষেত্রে আদালতের বক্তব্য ছিল, এই ঘটনায় বৃহত্তর প্রতারণাচক্র জড়িত রয়েছে। পুলিশ তদন্তে আরও জানতে পারে যে, আরও অনেকে তাদের কাছে প্রতারিত হয়েছেন। এরপর অভিযুক্তরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলে শীর্ষ আদালতও তাদের জামিন খারিজ করে দেয়। শুধু তাই নয়, ৬ মাসের মধ্যে এই মামলায় বিচার শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, এক্ষেত্রে অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা হল যাবজ্জীবন। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজার জন্যই তিনি আদালতের কাছে আবেদন জানাবেন। আজ এই মামলায় সাজা ঘোষণা করবেন বিচারক।