আরজি করে তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ সামনে আসতেই প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ।
শুধুমাত্র নিহত তরুণী চিকিৎসকের জন্য সুবিচার আদায় করা নয়, তাঁদের সমবেত আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল, রাজ্য়ের স্বাস্থ্য পরিষেবা ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা ক্ষেত্রে যত দুর্নীতি ও অনিয়ম রয়েছে, তা উপড়ে ফেলা। আন্দোলনকারীদের তরফে আগাগোড়া তেমনটাই দাবি করা হয়েছে।
এদিকে, সময়ের সঙ্গে উঠে এসেছে সম্পূর্ণ বিপরীত এক ছবিও। সামনে এসেছে এমন এক তালিকা, যে তালিকা অনুসারে - এমন কয়েকশো চিকিৎসককে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাঁরা আরজি কাণ্ডের প্রতিবাদে সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে পরিষেবা গুটিয়ে নেওয়ার কথা বললেও, সেই একই সময়ে নিজেরা বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে প্র্যাকটিস করে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন!
এই বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে লেখালিখি যেমন হয়েছে, তেমনই স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের মুখেও এর উল্লেখ শোনা গিয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে এবার সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের এক পিজিটি-র বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ তুলল জুনিয়র ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশন।
তাদের নিশানায় যিনি রয়েছেন, তিনি হলেন ডা. মনোজিৎ মুখোপাধ্য়ায়। অ্য়াসোসিয়েশনের দাবি, নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চেস্ট মেডিসিন বিভাগের এই পিজিটি চুটিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করছেন।
অথচ, পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুসারে, পিজিটি থাকাকালীন কোনও চিকিৎসকই অন্য কোনও বেসরকারি জায়গায় প্র্যাকটিস করতে পারেন না। যদি কেউ তেমনটা করেন, তাহলে তা বেআইনি বলে গণ্য করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো সুর চড়াতে শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে তাঁদের তরফে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়।
শুক্রবারের এই সাংবাদিক সম্মেলনে মনোজিতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন তাঁরা। সংগঠনের সদস্যদের বক্তব্য, আরজি করের ঘটনার সময় এই ডা. মনোজিৎ মুখোপাধ্য়ায়ই মুখে ন্যায়ের কথা বলেছিলেন। অন্য়ায়ের প্রতিবাদ করার কথা বলেছিলেন তিনি। অথচ, বাস্তবে তিনি নিজেই দীর্ঘদিন ধরে অন্য়ায় করে চলেছেন।
নিজেদের অভিযোগের স্বপক্ষে বেশ কিছু ছবি প্রমাণ হিসাবে পেশ করেছেন জুনিয়র ডাক্তার অ্য়াসোসিয়েশনের সদস্যরা। তাঁদের আরও দাবি, এর আগে মনোজিৎ তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্য়া অভিযোগও করেছিলেন।
কী সেই অভিযোগ? মনোজিতের বক্তব্য ছিল, তাঁকে মারধর করা হয়েছে। এমনকী, তার জন্য থানায় খুনের চেষ্টার অভিযোগও দায়ের করা হয়।
শুক্রবার পালটা ছবি ও ভিডিয়ো প্রকাশ করে অ্য়াসোসিয়শনের সদস্যরা জানান, কেউ মনোজিৎকে মারধর করেনি। গত ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস উপলক্ষে তাঁরা শিক্ষকদের উপহার দিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন। সেই সময় ধাক্কাধাক্কি হয় এবং তাতেই ডা. মনোজিৎ মুখোপাধ্যায়ের চশমা ভেঙে যায়।
প্রসঙ্গত, শুক্রবারই আরজি কর আন্দোলনের আরও এক 'মুখ' আসফাকুল্লা নাইয়ার বিরুদ্ধে ন্যাশনাল মেডিক্য়াল কমিশনকে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে জুনিয়র ডাক্তার অ্য়াসোসিয়েশন।