অবশেষে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করতে চলেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সূত্রের খবর, আগামী শনিবার থেকে তাঁরা কাজে ফিরবেন। যোগ দেবেন জরুরি বিভাগের কাজে। তবে শুক্রবার থেকেই স্বাস্থ্যভবনের সামনে থাকা অবস্থান তুলে নেওয়া হচ্ছে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পর থেকেই কর্মবিরতিতে সামিল হন জুনিয়র ডাক্তাররা। আর একগুচ্ছ দাবি জানিয়ে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্যভবনের সামনে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন। পরবর্তীতে তাঁদের প্রায় সব দাবিই মেনে নিয়েছে রাজ্য সরকার। আজ ১০ দফা নির্দেশিকাও জারি করেছেন মুখ্য়সচিব মনোজ পন্ত। সেই পরিস্থিতিতে অবস্থান তুলে নেওয়া হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। সূত্রের খবর, স্বাস্থ্যভবনের সামনে থেকে অবস্থান প্রত্যাহারের পরদিন তাঁরা কাজে যোগ দেবেন। যদিও সরকারিভাবে এখনও কিছু জানানো হয়নি। সূত্রের খবর, কিছুক্ষণ পরেই সাংবাদিক বৈঠক করে সরকারিভাবে সেই ঘোষণা করবেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা।
কী কী নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে?
— পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যত দ্রুত সম্ভব পর্যাপ্ত সংখ্যক অন-ডিউটি রুম এবং টয়লেটের বন্দোবস্ত করতে হবে।
—বসাতে হবে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা। করতে হবে পানীয় জল এবং আলোর ব্যবস্থা। তাতে কোনওরকম খামতি রাখা যাবে না।
— রাজ্যের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সকলের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসক, নার্স-সহ প্রত্যেক স্বাস্থ্যকর্মীর পাশাপাশি রোগী এবং সাধারণ মানুষ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব। আর সেজন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে পর্যাপ্ত সংখ্যক মহিলা পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়, তা নিশ্চিত করে হবে। রাতে হাসপাতালে নজরদারি চালাতে হবে পুলিশের মোবাইল টিমকে।
— নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যাতে কোনওরকম ফাঁকফোকর না থাকে, তা নিশ্চিত করতে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে স্বাস্থ্য দফতর। পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখবেন রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি সুরজিৎ করপুরকায়স্থ।
— রাজ্যের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে সিকিউরিটি অডিট করতে হবে। রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি সুরজিৎ করপুরকায়স্থের কাঁধে সেই অডিটের দায়িত্বে থাকবে। নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে হেল্পলাইন নম্বর চালু করারও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব।
— কোন সরকারি হাসপাতালে কতগুলি বেড খালি আছে, প্রতি মুহূর্তে সেই সংক্রান্ত তথ্য আপডেট করতে হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে যাতে প্রতি মুহূর্তের তথ্য দেওয়া হয়, সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ রিয়েল-টাইম আপডেট দিতে হবে। প্রতিটি হাসপাতালে একটি ডিসপ্লে বোর্ডও রাখতে হবে, যাতে দেখাবে যে ওই সময় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে কতগুলি বেড খালি আছে।
— বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের রেফার করা নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে। তাতে ইতি টানতে রেফারেল প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয়ভাবে নজরদারি চালাতে হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে ‘রেফারেল সিস্টেম’ চালু করতে হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যসচিব। সেইসঙ্গে রোগীর পরিবার যাতে অভিযোগ জানাতে পারে, সেই ব্যবস্থাও করতে হবে।
— হাসপাতালে যত দ্রুত সম্ভব শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। ডাক্তার, নার্স-সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের যত শূন্যপদ আছে, তা পূরণ করতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
— রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে প্যানিক বাটন রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব।