ভারতীয় সংবিধান কার্যকরী হয়েছে ১৯৫০ সালে। কিন্তু নারী সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আইন হয়েছে তারও বহু বছর পর। উদাহরণ, মাতৃত্ব কল্যাণ আইন। সংবিধান কার্যকরী হওয়ার ১১ বছর পর তৈরি হয় এই আইন। ১৯৬১ সালে। কিন্তু আই তৈরি হলে সেই আইনের সুবিধা সবার কাছে পৌঁছয় না। আবার কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা বিরোধী আইন রয়েছে। কিন্তু তার অপব্যবহারও হচ্ছে। শনিবার রাজা রামমোহন রায়ের জন্মদিনের প্রক্কালে ভারতীয় সংবিধান ও নারীদের অধিকার নিয়ে এক আলোচনা সভায় এমনই মত প্রকাশ করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
দূর্নীতির বিরুদ্ধে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একের পর রায় এক জনমানসে সাড়া ফেলেছে। সাড়া ফেলেছে রাজনৈতিক মহলেও। শনিবার তিনি আমন্ত্রিত ছিলেন রামমোহন রায়ের ২৫১তম জন্মদিন উপলক্ষে রামমোহন লাইব্রেরিতে আয়োজিত আলোচনা সভায়। অনুষ্ঠানে বিচারপতি বলেন, 'আইন থাকলেও গর্ভাবস্থায় ছুটি পান না অনেক মহিলা। কারণ দারিদ্র। নীচের স্তরে অন্যায় চলতেই থাকে।' তবে তিনি মনে করেন,'আইনকে সব মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়াটাই বিচার বিভাগের পরীক্ষা।'
এই প্রসঙ্গে তিনি সভার শ্রোতাদের মনে করিয়ে দেন, গৃহহিংসা আইন চালু হতে ২০০৫ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। আবার ২০১৩ সালে তৈরি হয় কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা প্রতিরোধ আইন। তবে আইন থাকলেও তা নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে।
সমাজের ভয়ে অনেক ক্ষেত্রে মহিলারা অভিযোগ জানাতেও দেরি করেন। আবার কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থা আইনের অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিচারপতি। তিনি বলেন, 'কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থায় অনেক মহিলা যতটা সম্ভব সহ্য করে নেওয়ার পর অভিযোগ জানান। আবার এর অপব্যবহারও হয়। কোনও বিশেষ সুবিধা নেওয়ার জন্য এটির ব্যবহার করা হয়।' বিচারপতির মতে, অভিযোগগুলি ভালো করে খতিয়ে দেখে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি।
তবে দেরিতে আইন তৈরি হলেও এই ধরনের আইনগুলির বিস্তর উপযোগিতা রয়েছে। সংবিধানে নারী-পুরুষ সমানাধিকারের কথা বলা হলেও মেয়ে ও শিশুদের জন্য বিশেষ আইন তৈরি করার কথা বলা হয়েছে। সেই আইনের যথাযথ ব্যবহার মেয়েদের এগিয়ে চলার পথ আরও প্রশস্ত করবে বলে মনে করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।