কসবায় তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষকে গুলি করে খুন করার চেষ্টার ঘটনায় সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। একটি রিপোর্টে দাবি করা হল, এই অপরাধের আরও এক মাস্টারমাইন্ড রয়েছে। গোয়েন্দারা নাকি জানতে পেরেছেন, পটনার বেউড় জেলে দীর্ঘদিন সময় কাটানো এক খুনের আসামি এই হামলার ছরকের পিছনে আছে। গুলজারের সঙ্গে মিলে কলকাতায় বসেই সুশান্তের ওপর হামলার ছক কষে সেই জেল ফেরত খুনের আসামি। রিপোর্ট অনুযায়ী, জেল ফেরত সেই আসামিই কলকাতায় নিয়ে এসেছিল ৭ এমএম ও ৯ এমএম পিস্তল। পুজোর পরই সে কলকাতায় এসেছিল। বিহারের পাপ্পু গ্যাংয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এই ব্যক্তি। এই আবহে পাপ্পু চৌধুরী এবং গুলজারের মধ্যে মিডল ম্যান হিসাবে নাকি কাজ করছিল সে। বিহারে সেই মিডলম্যানের খোঁজ চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা।
উল্লেখ্য, কসবা কাণ্ডের তদন্তে ইতিমধ্যেই বিহারের পাপ্পু গ্যাংয়ের যোগ পেয়েছে পুলিশ। দাবি করা হচ্ছে, এই ঘটনায় বৈশালী থেকে যে সকল দুষ্কৃতী কলকাতায় এসেছিল, তারা সবাই পাপ্পু চৌধুরীর দলের লোক। ইতিমধ্যেই তাদের মধ্যে যুবরাজ সিং গ্রেফতার হয়েছে। তবে আরও তিনজন এখনও পলাতক। জানা গিয়েছে, পলাতক তিন দুষ্কৃতীর খোঁজে বিহারে গিয়েছে লালবাজারের একটি দল। তদন্তে জানা গিয়েছে, ধৃত যুবরাজ পাপ্পুর দলের নতুন সদস্য। বাকি তিন জনের বিরুদ্ধে বিহারের বিভিন্ন থানায় ৪০টিরও বেশি মামলা রয়েছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।
প্রসঙ্গত, সুশান্তের ওপর হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যেই গুলজার সহ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে একজন হল ট্যাক্সিচালক আহমেদ খান। এদিকে জেরার মুখে গুলজার প্রথমে দাবি করেছিল, সে ১০ লক্ষ টাকা সুপারি দিয়েছে। পরে অবশ্য সে দাবি করে, সুপারি দেওয়া হয়েছিল ৫০ লাখ টাকার। ওদিকে বন্দুকবাজ যুবরাজ সিং দাবি করেছিল, মাত্র ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে সুশান্তকে খুন করতে রাজি হয়েছিল অভিযুক্ত যুবক। অ্যাডভান্সে আড়াই হাজার টাকাও পেয়েছিল সে।
এদিকে অবশেষে উদ্ধার হল তৃণমূল কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষকে খুনের চেষ্টায় ব্যবহৃত স্কুটারটি। সোমবারই ওই স্কুটারের মালিকের খোঁজ পেয়েছিল পুলিশ। মঙ্গলবার বন্ডেল রোডের একটি পরিত্যক্ত জায়গা থেকে স্কুটারটি উদ্ধার করেন লালবাজারের আধিকারিকরা। তদন্তে নেমে আধিকারিকরা জানতে পারেন স্কুটারটি কেনা হয়েছিল ৭ দিন আগে। কিনে স্কুটারটির নম্বর প্লেট বদলে ফেলা হয়। যে ব্যক্তির কাছ থেকে স্কুটারটি কেনা হয়েছিল তাকে সোমবার খুঁজে বার করে পুলিশ।
এর আগে মিডিয়ার সামনে মুখ খুলে গুলজার বলেছিল, 'সুশান্ত ঘোষ গুন্ডা। আমার জায়গা দখল করেছে, তাই মেরেছি। দু'হাজার স্কোয়ার ফুট জায়গা দখল করে নিয়েছিল হায়দার আলি। সে সুশান্ত ঘোষের গুন্ডা। সেই কারণেই তাকে গুলি করেছি।' পরে সুশান্ত জানান, গুলশন কলোনিতে পুর পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয়গুলি তাঁর হয়ে হায়দার দেখে থাকেন। এই গোটা ঘটনার সূত্রপাত নিয়ে দাবি করা হচ্ছে, ইএম বাইপাসের আনন্দপুরে জমি নিয়ে বিবাদ চলছিল সুশান্ত ও গুলজারের মধ্যে। সুশান্ত ঘোষ সেখানে প্রোমোটিং করছিলেন। সেই সূত্রেই সুশান্ত ঘোষকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে গুলজারের বিরুদ্ধে। তবে এই সবের নেপথ্যে শুধুই জমি বিবাদ কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।