এখন জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপি বিরোধী মঞ্চের মধ্যমণি হিসেবে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই চাইছেন সর্বভারতীয় কৃষক নেতারা। তাই নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতেই আগামী ৯ জুন কলকাতায় এসে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন কৃষক আন্দোলনের শীর্ষনেতারা। এবার দিল্লির বুকে কৃষক আন্দোলনের বর্ষপূর্তি হতে চলেছে। কৃষি আন্দোলনের নেতা রাকেশ তিকাইত–সহ কয়েকজন দেখা করতে চান বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে।
কৃষি আইন প্রত্যাহার এবং ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি স্বীকৃতির দাবিতে ২০২০ সালের নভেম্বর মাস থেকে দিল্লির সিংঘু সীমান্তে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তারই নেতৃত্ব আসছেন কলকাতায়। সেই নিরিখে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২২ সালে দেশের যে ৬ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হবে, তার মধ্যে উত্তরপ্রদেশ এবং পাঞ্জাব অন্যতম। কৃষি আন্দোলনের ঢেউয়ে ইতিমধ্যেই বিপর্যস্ত বিজেপি শিবির। আর দোসর ভ্যাকসিন, অক্সিজেনের অভাব এবং করোনা রোগীর মৃতদেহ নদীতে ভাসানো। এই পরিস্থিতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব চান তাঁরা।
একুশের নির্বাচনের মুখে পশ্চিমবঙ্গে জোড়া কৃষক মহা পঞ্চায়েতের আয়োজন করেছিলেন পাঞ্জাবের কৃষকনেতা রাকেশ টিকায়েত। কলকাতা এবং নন্দীগ্রামে তিনি জোড়া সভা করেছিলেন। তখন রাকেশের সঙ্গে ছিলেন সমাজকর্মী মেধা পাটেকরও। প্রথম থেকে জুড়ে ছিলেন সারা ভারত কৃষকসভার সম্পাদক হান্নান মোল্লাও। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সর্বাত্মকভাবে কৃষি আন্দোলনের সমর্থন করে এসেছেন। পাঠিয়েছিলেন দলের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনকে।
ইতিমধ্যে দেশজুড়ে আওয়াজ উঠেছে ‘ইন্ডিয়া ওয়ান্টস মমতাদি’। ট্যুইটারে এটাই নতুন ট্রেন্ড। এই সাক্ষাতের আয়োজন থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন মাথায় রেখে বৃহত্তর একটা বিরোধী জোট গঠন শুধু সময় এবং সঠিক পরিস্থিতির অপেক্ষা। বাংলায়ে যেভাবে মোদী–শাহ রথ রুখে দিয়েছেন তিনি তাতে এই আলোচনা হতেই পারে। কারণ সর্বভারতীয়স্তরে মোদী বিরোধী মুখ হয়ে উঠেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর গুরুত্ব বহুগুণ বেড়েছে। কৃষক আন্দোলনকারীদেরও ফের চাগিয়ে দিতে পারে তাঁর ভোকাল টনিক। তাই কৃষক আন্দোলনের এক বছরে দাঁড়িয়ে তিকাইতের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত ভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
শনিবার দলের জরুরি সাংগঠনিক বৈঠক ডেকেছেন মমতা। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে টিম মমতার সেনাপতি হিসেবে জনমানসে নিজের স্বতন্ত্র জায়গা করে নিয়েছেন যুব তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিশীলিত ভাষা, সাবলীল বাচনভঙ্গি আর মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার গুণ—এই তিনের সমাহারে নিজেকে পরিণত করেছেন অভিষেক। গেরুয়া শিবিরের শত কুৎসার মাঝেও শিরদাঁড়া সোজা রেখে বাংলাজুড়ে মমতার বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে বাংলার নেতা হয়ে উঠেছেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনের মুখে বারবার বলেছেন এখন বাংলাটা দেখছি। পরে দিল্লিটা দেখে নেব। রাকেশ তিকাইতের সাক্ষাৎ সেই জল্পনাকেই উসকে দিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।