আমফান ঘূর্ণিঝড়ে কলকাতা শহর লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল। বিপুল পরিমাণ সবুজ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। হাজার হাজার বড় গাছ উপড়ে পড়ে ধ্বংস হয়েছিল সবুজের। সরকারি হিসেবেই সেই সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছিল ১৫ হাজারের বেশি। গাছ ভেঙে পড়ে প্রকৃতির সবুজ রূপ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তখন প্রশ্ন উঠেছিল, এই বিপুল ক্ষতির পূরণ করা যাবে তো? গত সাড়ে চার বছর ধরে সেই লড়াই চলেছে। সবুজের ক্ষতি পূরণ করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে কলকাতা পুরসভা। এখনও পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ ২৮ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে শহরের নানা প্রান্তে। এমনকী শহরের একাধিক পথে ‘গ্রিন বাফার জোন’ তৈরি করা হয়েছে। এই উদ্যোগ পরিবেশ দূষণ রুখতে সহায়তা করবে বলে মনে করেন কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগের অফিসাররা।
সালটা ছিল ২০২০। আমফান ঘূর্ণিঝড়ে কলকাতার সবুজ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বহু পুরনো বড় গাছ থেকে শুরু করে ছোট–মাঝারি একাধিক গাছ ভেঙে পড়ে। আর তাতে সবুজের ক্ষতি হয়। শহরে এমনিই দূষণ বেশি। তার উপর গাছ না থাকলে আরও দূষণ বাড়বে বলেই মত অনেকের। আর কলকাতা পুরসভার তথ্য বলছে, শহরের ক্ষতিগ্রস্ত সবুজ পূরণ করতে ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ ২৮ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে আরও ১০ হাজার গাছ লাগানো হবে। কলকাতার ফুটপাতের নানা জায়গায় ‘গ্রিন বাফার জোন’ করা হয়েছে। আর সেটা করতে গিয়ে প্রায় ৫০ হাজার ছোট গাছ লাগানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: নারী নিরাপত্তায় এবার বিশেষ উদ্যোগ শিলিগুড়ি পুলিশের, দুর্গাপুজোয় আধুনিক অ্যাপ
এটা ভাল উদ্যোগ হলেও একটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সেটি হল, আর কোনও ঘূর্ণিঝড় আসবে না এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারছে না। বর্ষা দেরিতে আসায় এখনও তা চলছে এবং তাতেও কিছু ক্ষতি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে এভাবে কি ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব হবে? উঠছে প্রশ্ন। এই বিষয়ে কয়েকজন কলকাতা পুরসভার অফিসারদের বক্তব্য, নতুনভাবে এই গাছগুলি লাগানো হয়েছে। তবে তা বেড়ে উঠতে কমপক্ষে পাঁচ বছর লাগবে। তার মধ্যে আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসতেই পারে। তবে সেক্ষেত্রে গাছগুলিকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করতে হবে।’ ২০১৩ সালের পর বঙ্গে উন্নয়নের স্বার্থে কিছু গাছ কাটা হয়। তখন বাইপাসের ধারে একাধিক গাছ কাটা হয়েছিল। তার জেরে শহরের ‘গ্রিন কভারেজ’ এলাকা অনেকটা নেমে আসে। যদিও গত ১০ বছরে কলকাতায় অনেক গাছ লাগানো হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগও হয়েছে।
সবুজের অভাব দেখা দিলে তা প্রভাব ফেলে প্রকৃতির ভারসাম্যে। এমনটা মনে করেন পরিবেশবিদরা। তাই স্লোগান ওঠে, গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান। উদ্যোগ অনেক আগে থেকে শুরু হলেও তাতে বারবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যা নিয়ে আজও চিন্তিত কলকাতা পুরসভা। গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখন সেই আশঙ্কা রয়ে গিয়েছে। তাহলে কেন ‘গ্রিন কভারেজ’ বাড়ছে না? এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে শহরে ৩৩ শতাংশ সবুজ অঞ্চল থাকা প্রয়োজন। এটা কলকাতায় বেশ কঠিন কাজ। কারণ কলকাতা ২১২ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আছে। আর এই ২ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় গাছ লাগাতে হলে কমপক্ষে এক কোটি বড় গাছ লাগাতে হবে। তার জায়গা নেই। তবে বিকল্প পথে এগোনো হচ্ছে।