২০১৫ সালে যেখানে ছিল, এবার সেখানেই তার থেকেও নীচে নেমে গেল বিজেপি। কলকাতা পুরনিগমে অবস্থা আরও খারাপ হল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে যে ১১ ওয়ার্ডে এগিয়েছিল, সেগুলির মধ্যেই সব ওয়ার্ডে জিততে পারল না গেরুয়া শিবির। সাকুল্যে তিনটি ওয়ার্ডে জয় এসেছে।
এবারের পুরভোটে কলকাতায় মাত্র তিনটি ওয়ার্ডে জিতেছে বিজেপি - ২২, ২৩ এবং ৫০ নম্বর ওয়ার্ড। যেখানে মাস সাতেক আগেই বিধানসভা ভোটে ১১ টি ওয়ার্ডে এগিয়েছিল বিজেপি। সেই ফলও ধরে রাখতে পারেনি গেরুয়া শিবির। শুধুমাত্র ২২ এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে জিততে পেরেছে। সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবে জিতেছে ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে। বিধানসভা ভোটের নিরিখে ২১, ২৪, ২৫, ২৭, ৩১, ৪২, ৭০, ৭৪ এবং ৮৭ ওয়ার্ডে যে লিড ছিল, তা জয়ে পরিণত করতে পারেননি সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী। তাও কিনা যে বিধানসভা নির্বাচনে কলকাতায় স্রেফ উড়ে গিয়েছিল বিজেপি। পরে ভবানীপুর উপ-নির্বাচনের ৭০ এবং ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি বিবেচনা করলেও বিধানসভা এগিয়ে থাকা ওয়ার্ডেও হেরে যাওয়ার অস্বস্তি দূর হবে না বিজেপির।
এমনিতে রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এবারের কলকাতার পুরভোটে বিজেপি যে বোর্ড গঠন করতে পারবে না, তা স্পষ্ট ছিল। যা বুঝে গিয়েছিলেন বিজেপির নেতারা। তাও দুই অঙ্কে পৌঁছানোর একটা লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল। কিন্তু ১০-এর ধারেকাছেও গেল না বিজেপি। এমনকী ২০১৫ সালের নির্বাচনেও (যখন রাজ্যে বিজেপির শক্তি ছিল না) সাতটি ওয়ার্ডে (৭, ২২, ২৩, ৪২, ৭০ ৮৬, এবং ৮৭) জিতেছিল গেরুয়া শিবির। পরে সাত নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী প্রার্থী বাপি ঘোষ এবং ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী প্রার্থী অসীম বসু তৃণমূলে যোগ দেন। ফলে খাতায়কলমে কলকাতায় বিজেপি কাউন্সিলরের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল পাঁচ। সেই সংখ্যাটাও ছুঁতে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি।
অথচ ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কলকাতায় বিজেপি বেশ ঈর্ষণীয় ফল করেছিল। ১৪৪ টির মধ্যে ৫১ টি ওয়ার্ডে এগিয়েছিল বিজেপি। রাজনৈতিক মহলের মতে, সেটা স্রেফ নরেন্দ্র মোদীর ঝড়ের কারণে হয়েছিল। হাওয়া ছিল গেরুয়া শিবিরের পক্ষে। কিন্তু বিধানসভা ভোট বা পুরসভা ভোটের ক্ষেত্রে সংগঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর কলকাতায় যে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের সংগঠনের অবস্থা যে একেবারে খারাপ, তা আবারও প্রমাণ হয়ে গেল। তার জেরেই এভাবে নুইয়ে পড়ল পদ্ম।