কলকাতার রাজপথে মোবাইলে কথা বলছিলেন কর্পোরেট সংস্থার এক অফিসার রাজীব বোস। কিন্তু সেই কথা বলা চলাকালীন রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন। হঠাৎ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা সুমনা রায় বাড়ি ফেরার সময় মোবাইলে কথা বলছিলেন স্বামীর সঙ্গে। মাঝপথে কল ড্রপ করল। উলটো প্রান্তে থাকা স্বামী টেনশনে আবার একবার ফোন করলেন। সেনাবাহিনীর অফিসার নির্মল সাহা ফোন করেন স্ত্রী প্রিয়াঙ্কাকে। বাড়ি ফেরার সময় কিছু কিনে আনতে হবে কিনা জানতে। কিন্তু কল ড্রপ করে গেল। এমন অজস্র উদাহরণ আছে কলকাতার বুকে। তাই ২০২৫ সালে আর এই সমস্য়ায় পড়তে না হয় তার জন্য পদক্ষেপ করছে কলকাতা পুরসভা। কলকাতার নানা ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট ব্যবধানে বসানো হচ্ছে এয়ার ফাইবার।
এই এয়ার ফাইবার বসালে কল ড্রপের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে বলে মনে করছেন কলকাতা পুরসভার কর্তারা। এই এয়ার ফাইবার কী? ২০১৬ সালে কলকাতার ফুটপাত খুঁড়ে বসানো হয়েছিল অপটিক্যাল ফাইবার। কয়েক গজ দূরত্বে এয়ার ফাইবার মাথা তুলে থাকত। সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে রাজ্য তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। সেই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রকের অনুমোদন নিয়ে রাজ্য সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি দফতর কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাকে এয়ার ফাইবার বসানোর অনুমোদন দিতে চলেছে। এই কাজে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবে কলকাতা পুরসভার অ্যাসেসমেন্ট বিভাগ।
আরও পড়ুন: প্রবল তুষারপাতে কাবু হিমাচল প্রদেশ, ক্রিসমাসে যেন এক শুভ্র ওয়ান্ডারল্যান্ড, বন্ধ পথ
কী হবে সর্বত্র এয়ার ফাইবার বসলে? তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই এয়ার ফাইবার লাগানো থাকলে কোনও বাধা–বিপত্তি ছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলা যাবে। কল ড্রপ করবে না। এই বিষয়ে কলকাতা পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘ল্যাম্পপোস্ট, বিল বোর্ড, বাস স্ট্যান্ড এবং বহুতল আবাসনের উপরে কোনও স্ট্যান্ডের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে এয়ার ফাইবার। এই এয়ার ফাইবার মোবাইল ফোনের সিমকে সক্রিয় রাখে। সেক্ষেত্রে কথা বলার সময় কল ড্রপের আশঙ্কা তৈরি হলেই সক্রিয় হবে ওয়েভলেন্থ। অ্যাসেসমেন্ট বিভাগের থেকে তথ্য চাওয়া হয়েছে।’
কলকাতা শহরে এই কাজ হলে তা তাক লাগানোর মতো ঘটনা হবে। কলকাতাকে মেগা এ–ওয়ান সিটি বলা হয়। তাই একানে এই কাজ হলে বিপুল পরিমাণ মানুষের উপকার হবে। আর মোবাইল সংস্থাগুলি সম্পর্কে ভাল ধারণা তৈরি হবে। না হলে এই কল ড্রপ সমস্যার জন্য মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারকে দায়ী করা হয়। কলকাতা পুরসভার এক অফিসার জানান, পুরসভার সম্পত্তি ব্যবহার করা হবে। তাই সংশ্লিষ্ট মোবাইল সংস্থাকে পরিষেবা বাবদ সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। একাধিক মোবাইল ফোন সংস্থা ইতিমধ্যেই এই ক্ষেত্রে সক্রিয় হয়েছে। মূল উদ্দেশ্য টানা পরিষেবা বজায় রাখা।