মেয়াদ পার হওয়ার দেড় বছর পর ফের অনুষ্ঠিত হচ্ছে কলকাতা পুরভোট। বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের একচেটিয়া জয়ের পর কলকাতা পুরভোটের উত্তাপটাও যেন কিছুটা কম। এই আবহে রবিবাসরীয় ভোটনুখী কলকাতার কোন কোন ওয়ার্ডে নজর রাখবেন? কোন ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েছেন কোন হেভিওয়েট প্রার্থী? কোন ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েছেন সর্বাধিক প্রার্থী? এই সব খুঁটিনাটি জানতে ইচ্ছে হতেই পারে। পুরভোটের ওয়ার্ড এবং প্রার্থী সংক্রান্ত এই ধরনেরই কিছু আকর্ষণীয় তথ্য জানুন এখানে।
পুরভোটে ১৪৪টি আসনে মোট প্রার্থী সংখ্যা ৯৫০। তৃণমূল সব আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এদিকে বিজেপি প্রার্থী দেয়নি দুটি আসনে। অপরদিকে বামেরা প্রার্থী দিয়েছে ১২৮ আসনে। যদিও তাদের মোট প্রার্থীর সংখ্যা ১২৯। কারণ ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএম আর আরএসপি দু’দলই একে অপরের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে। কংগ্রেস আবার প্রার্থী দিয়েছে ১২১টি আসনে। নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী ৩৭৮। তাঁদের মধ্যে যেমন রয়েছেন প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন তনিমা চট্টোপাধ্যায়। তেমনই আছেন বিজেপির প্রয়াত কাউন্সিলর তিস্তা বিশ্বাসের স্বামী গৌরব বিশ্বাস। এদিকে কলকাতায় সবচেয়ে বেশি ভোটার ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে। ৯৫,০৩৮ জন। সবচেয়ে কম ভোটার রয়েছেন ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডে। এখানে ভোটার সংখ্যা ১০,০৩৩।
অপরদিকে কলকাতায় সর্বাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ১৪২ নম্বর ওয়ার্ডে। এই ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা ১৬। ১৪২ ছাড়াও দক্ষিণ কলকাতার চারটি ওয়ার্ড বেশ নজরকাড়া হয়ে উঠেছে। কলকাতা পুরসভার ৮২ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে প্রার্থী হয়েছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কলকাতা পুরসভার ৮৫ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দেবাশিস কুমার। তিনি আবার এলাকার বিধায়ক। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ কলকাতা জেলার সভাপতিও। দেশপ্রিয় পার্ক সংলগ্ন এলাকা নিয়ে এই ওয়ার্ড। কলকাতা পুরসভার ৮৮ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করেছে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ মালা রায়কে। কলকাতা পুরসভার অন্তর্গত ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর রতন মালাকার এবার বাদ পড়েন তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা থেকে। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওয়ার্ড হিসেবে চিহ্নিত এই আসন থেকে তৃণমূলের টিকিটে লড়তে চলেছেন তাঁরই ভাতৃবধূ কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই নজর থাকবে এই কেন্দ্রেও।
এদিকে প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন তনিমা চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেও বদল করে তৃণমূল। তাঁর বদলে ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে টিকিট দেওয়া হয় সুদর্শনা মুখোপাধ্যায়কে। এই ওয়ার্ডের উপর বিশেষ নজর থাকবে সবার। সুব্রতবাবুর আবেগকে কাজে লাগিয়ে তনিমা এই আসনে তৃণমূল প্রার্থীকে হারাতে পারেন কি না, তা নিয়ে আগ্রহ অনেকেরই। এদিকে কলকাতা পুরসভার ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন বিজেপি কাউন্সিলর তিস্তা দাস বিশ্বাসের স্বামী গৌরব বিশ্বাস বিজেপিতে টিকিট না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে পুরভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। হিন্দু মহাসভা এখানে গৌরব বিশ্বাসকে সমর্থন জানিয়েছে। তাই ভোট কাটাকাটিতে এই আসন বিজেপির হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এই আসনে বিজেপি প্রার্থী করেছে রাজর্ষি লাহিড়ীকে। এখন অনেকেই দেখতে চান রাজর্ষী বিজেপির আগেরবারের এই জেতা আসন ধরে রাখতে পারেন কি না।
এদিকে উত্তরে ২ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন শান্তনু সেনের স্ত্রী কাকলি সেন। আবার দীর্ঘদিনের ক্রিকেট প্রশাসক বিশ্বরূপ দে তৃণমূলের হয়ে প্রার্থী হয়েছেন ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে। আবার পঞ্চাশ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন বিজেপির সজল ঘোষ। অল্পদিনের মধ্যেই কলকাতার রাজনীতিতে বিজেপির পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন সজল। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পেয়েছেন সজল। শুভেন্দু অধিকারী নিজে এসেছেন তাঁর প্রচারে। এই পরিস্থিতিতে তিনি বিজেপির সবথেকে হাইপ্রোফাইল প্রার্থী। এখন দেখার বিজেপির মান রক্ষার্থে সজল কতদূর সফল হন।