আরজি করে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল পাড়ার মেয়েকে। তিনি ছিলেন চিকিৎসক। তবে পাড়ার মেধাবী এই তরুণীকে জড়িয়ে রয়েছে অনেক অনেক স্মৃতি। যেদিন প্রথম খবরটা এসে পৌঁছেছিল সোদপুরের ওই পাড়ায় সেদিন থেকে ক্ষোভে ফুঁসছিল পাড়ার বাসিন্দারা। এই রাস্তা দিয়েই তো তিনি যেতেন। সেই চিকিৎসককে এভাবে অত্যাচার করে খুন করা হয়েছে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না পাড়ার লোকজন।
এরপর গোটা দেশ নেমেছিল প্রতিবাদের রাস্তায়। বিদেশ থেকে এসেছিল প্রতিবাদের ঢেউ। নির্যাতিতার পাড়াতেও কখনও মোমবাতি জ্বেলে, কখনও মিছিল করে রাস্তায় নেমেছিলেন এলাকার লোকজন। তবে সকলের মতো তাঁদেরও চোখ ছিল কবে হবে নির্যাতিতার বিচার। এরপর বিচার হয়েছে। আর সেই বিচারে দোষী সঞ্জয় রায়ের আমৃত্যু কারাদণ্ড। তবে এলাকার অনেকেই ভেবেছিলেন হয়তো ফাঁসি হবে। না সেটা হচ্ছে না।
পাড়ার অনেকেই চেয়েছিলেন সঞ্জয় রায়ের যেন ফাঁসি হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি এই রায়ে আমরা একদমই খুশি হচ্ছি না। আমরা চেয়েছিলাম সঞ্জয়ের ফাঁসি হোক।
একটা সময় পাড়ার অনেকেই ভাবছিলেন কলকাতা পুলিশের হাত থেকে সিবিআইয়ের হাতে মামলা যাওয়ার পরে হয়তো বিরাট কিছু পরিবর্তন হবে। হয়তো নতুন কেউ গ্রেফতার হবে এই ঘটনায়। কিন্তু বাসিন্দাদের একাংশের মতে, তেমন কিছু তো হল না।
সেই সঙ্গেই নির্যাতিতার প্রতিবেশীদের একাংশের দাবি, এই ঘটনা সঞ্জয়ের একার পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয়। কারা তাকে পাঠিয়েছিল, সেমিনার হলে কেন সে গিয়েছিল , সেখানে যে তরুণী চিকিৎসক রয়েছেন সেই খবর তাকে কে দিল এমন নানা প্রশ্নের কোনও উত্তর পাচ্ছেন না নির্যাতিতার প্রতিবেশীরা। তবে আদালতের রায়কে সম্মান জানাচ্ছেন সকলেই। তবে কোথাও যেন একাধিক প্রশ্নের উত্তর অমিমাংসিতই থেকে গিয়েছে।
এদিকে সোমবারই শিয়ালদা আদালতে আরজি কর মামলায় চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা সঞ্জয় রায়কে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছেন বিচারক অনির্বাণ দাস। আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমনা দিতে হবে সঞ্জয় রায়কে। এর আগে গত শনিবার আদালতের তরফ থেকে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৩ (ধর্ষণ), ৬৪ (ধর্ষণের সময় এমন ভাবে আঘাত করা, যাতে মৃত্যু হয়), ১০৩ (১) নং (খুন) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এই আবহে সঞ্জয়কে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৬৪ ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০,০০০ টাকা জরিমানা, ৬৬ ধারায় আওতায় আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ১০৩ (১) ধারার আওতায় সশ্রম যাবজ্জীবনের সাজা ও ৫০,০০০ টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন বিচারক। এদিকে বিচারক নির্দেশ দেন, নির্যাতিতার পরিবারকে ১৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাষ্ট্রকে। বিচারক জানিয়েছেন, এই মামলা বিরলের থেকে বিরলতম নয়।