ধনঞ্জয়ের ফাঁসি হয়েছিল। আর সঞ্জয়ের আমৃত্যু কারাদণ্ড। ধনঞ্জয়ের ফাঁসির নির্দেশ কার্যকর করেছিলেন নাটা মল্লিক। নাটা মল্লিক ছিলেন ফাঁসুড়ে। তাঁকে সেই কাজে সহায়তা করতেন পুত্র মহাদেব। সেই নাটা মল্লিক আর নেই। তবে অনেকেই যেন মনে মনে চাইছিলেন সঞ্জয়ের ফাঁসি হলেই ভালো হত। তবে আদালতের রায়কে সম্মান জানান মহাদেব।
সংবাদ প্রতিদিনের প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে, মহাদেব জানিয়েছেন, আদালতের রায়কে সম্মান জানাই। আদালত সাক্ষ্যপ্রমাণ দেখে রায় দিয়েছে। তবে আমাদের সকলের পরিবারে মেয়ে রয়েছে। আরজি করে যেভাবে একজন কর্মরত ডাক্তারকে খুন ও ধর্ষণ করা হল তার শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদণ্ড বলে মনে করি।
বংশপরম্পরায় ফাঁসুড়ের কাজ করেছেন এই পরিবারের সদস্যরা। দাদু শিবপাল মল্লিকও একই দায়িত্ব সামলাতেন। এরপর নাটা মল্লিক বাবার পথেই হাঁটেন। ধনঞ্জয়ের ফাঁসি দেন তিনিই। সেবার দড়ি তৈরিতে সহায়তা করেছিলেন মহাদেব। এবারও সঞ্জয়ের মতো দোষীকে ফাঁসিতে ঝোলাতে হাত কাঁপত না মহাদেবের। কিন্তু ফাঁসির আদেশ হয়নি সঞ্জয়ের। তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
যদি সঞ্জয়ের ফাঁসি হত তবে মহাদেবই সেই দায়িত্ব পালন করতেন। বয়স ষাটের কোঠায়। তবে এখনও বেশ কর্মঠ। এটাই হত মহাদেবের প্রথম কাজ। কিন্তু সেটা হওয়ার নয়। কারণ সঞ্জয়ের ফাঁসি হচ্ছে না। কেবলমাত্র যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
তবে কোনও অপরাধীকে যখন ফাঁসি দেওয়া হয় সেই প্রক্রিয়া বেশ লম্বা। সবথেকে বড় কথা হল যাঁর ফাঁসি হবে তার গলা থেকে যেন রক্ত বেরিয়ে না যায় সেটা দেখতে হয়। সেকারণে ফাঁসির দড়িকে অত্যন্ত মসৃন রাখতে হয়।
ধনঞ্জয়ের ফাঁসির আগের রাতে ঠিক কী হয়েছিল?
আগের রাতেই সেবার প্রেসিডেন্সি জেলে চলে গিয়েছিলেন নাটা মল্লিক। সঙ্গে ছিলেন মহাদেব। সাল ২০০৪। তখন বাম জমানায়। রাতভর ফাঁসির দড়িতে সাবান ও কলা আর ঘি দিয়ে ঘষার কাজ করা হয়। বেশ লম্বা দড়ি। সেই দড়ি দিয়ে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।রাত ভর সেই দড়িতে মালিশ করে মসৃন করা হয়। এরপর অপরাধীর গলায় কালো কাপড় পরিয়ে দিতে হয়।
তবে ফাঁসি দেওয়ার জন্য মানসিক শক্তি অত্যন্ত বেশি হওয়া দরকার। মহাদেব বললেন, বাবা সব সময় বলত ফাঁসি যখন দিতে যাবে তখন অপরাধীর অপরাধকে মাথায় রাখবে। অপরাধীর চোখ মুখের দিকে তাকাবে না। কতটা নৃশংস অপরাধ সে করেছে সেটা মনে রাখবে। এতে তার প্রতি কোনও দুর্বলতা থাকবে না। আর একটা কথা হল ফাঁসির আগে কোনওভাবেই অপরাধীর সঙ্গে দেখা করেন না ফাঁসুড়ে। এতে মন দুর্বল হয়ে যেতে পারে।