কলকাতায় ঘূর্ণিঝড় আমফানের তাণ্ডবে নষ্ট হল কয়েক কোটি টাকার বই। চূড়ান্ত ক্ষতির শিকার কলেজ স্ট্রিটের অগণিত প্রকাশক ও বই বিক্রেতারা।
বুধবার শহরজুড়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে আমফান। ঘণ্টায় ১৩০ কিমি বেগে বয়ে চলা প্রবল ঝড়ে উড়ে গিয়েছে কলেজ স্ট্রিট, শ্যামাচরণ দে স্ট্রিট, সূর্য সেন স্ট্রিটে ফুটপাথের কোনও বুকস্টলের টিনের চাল, কোথাও বা রাস্তার জমা জল ঢুকে নষ্ট হয়েছে থরে থরে রাখা বই। বিপুল এই ক্ষতি কী ভাবে সামলাবেন, তা ভেবে কূল-কিনারা পাচ্ছেন না বই বিক্রেতারা।
বুধবার রাত থেকেই জল জমতে শুরু করে কলেজ স্কোয়্যার ঘেঁষা সূর্য সেন স্ট্রিটে। রাস্তায় সারিবদ্ধ নীচু দোকানগুলিতে হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করে রাতেই। জলে ভিজে প্রায় লাখ টাকার বইপত্র নষ্ট হয়েছে, জানালেন ইতিকথা প্রকাশনার কর্ণধার শূদ্রক উপাধ্যায়। জানান, রাতেই রাস্তায় জল জমার খবর পেয়েছিলেন। লকডাউনের জেরে সকালেও পৌঁছতে পারেননি তাঁদের খোয়াবনামা-ইতিকথা বইঘরে। তবে পরিচিতদের থেকে খবর পেয়েছেন এবং ফেসবুকে ছবিও দেখেছেন সর্বনাশের। ‘জানি না কী ভাবে এত বড় ক্ষতি সামলাব,’ জানালেন শূদ্রক।
ঝঞ্ঝায় বড়সড় ক্ষতি হয়েছে বলে জানালেন সুপ্রকাশ বইঘরের কর্ণধার অসীম দাস। এ দিন সকালে খবর পান, আমফানের ঝাপটায় উড়ে গিয়েছে দোকানের নতুন টিনের চালা। কোনও মতে পৌঁছে দেখেছেন, আচ্ছাদনহীন দোকানে অঝোরধারায় বৃষ্টির জল বরবাদ করে দিয়েছে অসংখ্য বই ও বিভিন্ন জেলা থেকে প্রকাশিত দুর্মূল্য পত্রিকা। কিছু বই কি বাঁচানো গেল? ম্লান হেসে অসীম জানান, কিছুই বাঁচানো যায়নি। পাঁচ লাখ টাকার উপরে লোকসান কোন উপায়ে সামাল দেবেন, জানেন না নিরুপায় বই ব্যবসায়ী।
উঁচু দোকানঘর থাকায় এমন অপূরণীয় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন কলেজ স্ট্রিট চত্বরের জনপ্রিয় ‘দীপুদার দোকানের’ কর্ণধার দীপু দে। তবে জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে দুমড়ে গিয়েছে বাড়ির তিনতলার কাঠের জানলা। সেখানে বই রাখা ছিল না ভেবে কিছুটা স্বস্তির শ্বাস নিতে পারছেন তিনি। হিন্দুস্তান টাইমস-এর সঙ্গে ফোনালাপে জানালেন, এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটে হাঁটুজল থাকলেও পুরসভা পাম্প চালানোর পরে বেলা ১২টা নাগাদ জল অনেকটা নেমে যায়। কিন্তু তাঁর দোকানের কাছেই ফুটপাথের বই বিক্রেতাদের দুর্দশার কথা ভেবে ভারাক্রান্ত দীপুর মন।
কলেজ স্ট্রিট চত্বরের বিপুল ক্ষয়ক্ষতির খবরে ভেঙে পড়েছেন বইপাড়ার বটবৃক্ষ হিসেবে পরিচিত সুবিখ্যাত মিত্র ও ঘোষ প্রকাশনার প্রাণপুরুষ অশীতিপর সবিতেন্দ্রনাথ রায়। সংস্থার কর্ণধার তথা সবিতেন্দ্রবাবুর কন্যা ইন্দ্রাণী রায় এ দিন ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, ‘এ ক্ষতি যেমন প্রকাশক ও পুস্তকবিপণনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের, তেমনই পাঠকেরও। জলে ভেসে যাওয়া বইয়ের পাতা দেখে অস্থির লাগছে খুবই। আশা করি এই ক্ষতি এড়িয়ে উঠে দাঁড়াবে বইপাড়া, বরাবরের মতোই।’
ওই পোস্টেই তিনি জানিয়েছেন ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে বেহাল বইপাড়ার পরিস্থিতি দেখে ব্যথিত সবিতেন্দ্রবাবু মনে করছেন, নিজেদের স্বার্থেই এবার প্রকাশকদের সংঘবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। বয়সজনিত কারণে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত থাকতে পারবেন না জানিয়ে প্রস্তাবিত ‘বইপাড়া রিলিফ সোসাইটি’-র ভার নিতে নবীনদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বইপাড়ার মহীরূহ।