ইতালি, আমেরিকা ছাড়িয়ে এগোতেই দেখা মিলবে বিশাল বঙ্গবন্ধুর কাটআউট। অর্থাৎ বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক কাটআউট। হ্যাঁ, এটা বাংলাদেশ পাভেলিয়ন। আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় এই প্যাভেলিয়নে যেতে গেলে পার করতে হবে ইতালি, আমেরিকার প্যাভেলিয়ন। এবার কলকাতা বইমেলার থিম কান্ট্রি বাংলাদেশ। আগে এত বড় বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ন দেখা যায়নি।
কেমন করে সেজে উঠেছে সেটি? এখানে পৌঁছতেই দেখা মিলবে মুক্তিযুদ্ধের একাধিক ঐতিহাসিক কাটআউট। সঙ্গে বঙ্গবন্ধু তো রয়েছেই। সন্ধ্যে নামতেই নিয়ন আলোয় গোটা বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ন যেন আন্তরিকতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রবেশপথেই বঙ্গবন্ধুর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের সেই কাটআউট বলে দিচ্ছে এপার–ওপারে কোনও বিভেদ নেই। রয়েছে রক্ত–ঋণের সম্পর্ক।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বইমেলার উদ্বোধন করতে এসে বলেছিলেন, ‘কাঁটাতার দিয়ে কোনও সম্পর্ককে আলাদা করা যায় না। দেশের সীমানা বোঝানোর জন্য তা করা হয় ঠিকই। হৃদয়ের সম্পর্ক এভাবে ঠেকানো যায় না। সেখানে ভারত–বাংলাদেশের সম্পর্ক তো চিরদিনের। আত্মার–আত্মীয়ের। প্রাণের টান রয়েছে দুই বাংলার। রবীন্দ্রনাথ–নজরুল মিলে মিশে তো এই দুই জায়গায় একাকার হয়েছিলেন। তাই সৌভ্রাতৃত্বের মেলবন্ধন ঘটেছে দুই বাংলায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের প্রতি আমার শুভকামনা রইল।’
এরপর এক ব্যক্তিকে দেখা গেল বাংলাদেশের প্যাভেলিয়নে প্রবেশ করতে। তিনি ঢুকতেই ভিতরে থাকা যুবক বলে উঠলেন, আসেন। কেমন আছেন? ওই ব্যক্তিটি বলে উঠলেন, কতদিন পর এই প্রাণের ভাষা শুনলাম। মনটা ভরে গেল। আপনি কেমন আছেন ভাই? যুবকটি উত্তর দিল, আপনাদের দোয়ায় চলে যাচ্ছে। আসেন ভিতরে আসেন। বঙ্গবন্ধুর অনেক নতুন বই এসেছে। দ্যাখেন ভাল লাগব। যুবকটির এই কথা শুনে ব্যক্তির চোখে প্রায় জল নেমে এসেছে। কাঁপা গলায় জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার নাম কি ভাই? যুবকের উত্তর, রফিকুল। দুটি বই কিনলেন ব্যক্তিটি। আর জড়িয়ে ধরে বললেন, ভালো থেকো রফিকুল। সুস্থ থেকো। আবার দেখা হবে। ততক্ষণে চোখে জল রফিকুলের। গঙ্গা–পদ্মা যেন মিশে একাকার।
এই মিলন দেখেছেন অনেকেই। মাঝের একটা বছর করোনাভাইরাসের জন্য বন্ধ ছিল কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা। এবার আবার নিজস্ব মেজাজে তা শুরু হয়েছে। ওপার বাংলা থেকে অনেকেই এসেছেন এপারে বইমেলার স্টলে। আর বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ন থেকে বাইরে বেরোলেই মিলবে ভেটকি মাছের ফ্রাই, ফিশ ফিঙ্গারের গন্ধ। কারণ বাংলাদেশে প্যাভেলিয়নের গায়েই করা হয়েছে দিঘা মৎস্য দফতরের স্টল। সবমিলিয়ে ভিড় বাড়ছে বাংলাদেশ প্যাভেলিয়নে।