কলকাতা পুরসভায় দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে নতুন কড়া নজরদারি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। পুরসভা থেকে জারি করা নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এখন থেকে পুরসভার আধিকারিকরা সরাসরি মেয়র কিংবা কোনও মেয়র পারিষদের কাছে ফাইল পাঠাতে পারবেন না। ফাইলগুলি প্রথমে কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার, যুগ্ম মিউনিসিপ্যাল কমিশনার কিংবা মিউনিসিপ্যাল সেক্রেটারি যাচাই করবেন। তাঁরা ছাড়পত্র দিলে তবেই ফাইল মেয়র কিংবা মেয়র পারিষদদের কাছে যাবে।
এই নতুন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে এখন শোরগোল পড়েছে কলকাতা পুরসভার অন্দরে। পুরকর্তাদের একাংশের মতে, মেয়র পারিষদরা অনেক সময়ে আইনকানুন না জেনেই ফাইলে সই করছেন, যা পরবর্তী সময়ে নানা আইনি সমস্যার সৃষ্টি করছে। অডিটের সময়ে সেই ভুলত্রুটিগুলো ধরা পড়ছে। তাই জনপ্রতিনিধিদের ভবিষ্যতে এই ধরনের সমস্যায় না পড়তে হয়, সেজন্যই এই নতুন ব্যবস্থা।
তবে মেয়র পারিষদদের কিছু অংশ মনে করছেন, এই নতুন নির্দেশিকা তাঁদের উপর নজরদারি করার উদ্দেশ্যেই প্রণয়ন করা হয়েছে। পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী, ৫০ লক্ষ টাকার মধ্যে খরচের প্রকল্পগুলির অনুমোদন দেন মেয়র পারিষদরা। তার বেশি খরচ হলে মেয়রের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। কিন্তু নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, যাবতীয় ফাইল পুর কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার, যুগ্ম কমিশনার কিংবা মিউনিসিপ্যাল সেক্রেটারির হাত ঘুরে আসবে। তাঁরা যে কোনও যুক্তি খাড়া করে ফাইল আটকে দিতে পারেন বলে মনে করছেন মেয়র পারিষদদের একাংশ।
এক মেয়র পারিষদের মতে, "পুরসভার কাজ হলো নাগরিক পরিষেবা দেওয়া। সে জন্য অনেক সময়েই জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে হয়। এখন ফাইল পাশ করাতে বাড়তি সময় লাগছে, যা জরুরি পরিষেবাকে ব্যাহত করছে।"
আরও পড়ুন। পুজো কমিটিগুলির কাছে পৌঁছচ্ছে কলকাতা পুলিশের নির্দেশ, মানতে হবে নানা বিধি
তবে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিং এই নতুন ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "আমাদের ভালোই হলো। অফিসাররা যদি সবটা দেখে নেন, তাহলে আমাদের ঘাড়ে আর দোষ চাপবে না।"
পুরকর্তারা জানান, যে কোনও কাজ করানোর জন্য সাধারণত পুরসভার সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়াররা প্ল্যান-এস্টিমেট তৈরি করে প্রথমে এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে ফাইল পাঠান। সেই ফাইল ডেপুটি ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বিভাগীয় ডিজি-র কাছে যায়। খরচের পরিমাণ ৫০ লক্ষ টাকার নীচে হলে ডিজি-রা মেয়র পারিষদকে দিয়ে ফাইল অনুমোদন করিয়ে নিতেন। এরপর সেই ফাইল কোনও অতিরিক্তি কমিশনার অথবা যুগ্ম কমিশনারের কাছে যেত। মেয়র পারিষদ ফাইলে একবার সই করে দিলে তাঁরা সচরাচর আপত্তি করতেন না। ফলে, ফাইলে অনিয়ম হলেও সেটা শোধরানোর সুযোগ থাকত না।
এই নতুন ব্যবস্থা চালু করার ফলে কলকাতা পুরসভায় কাজের গুণগত মান ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে।