আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি, অর্থাৎ - পরবর্তী আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের আগেই, অন্যান্য ভাষার পাশাপাশি যাতে বাংলা ভাষা ও হরফেও, কলকাতা শহরের সমস্ত বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং, দোকানের সাইন বোর্ড, সরকারি দফতরের নামের বোর্ড, রাস্তার নামফলক প্রভৃতি লেখার প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলকভাবে সেরে ফেলা যায়, সেই লক্ষ্যে কোমর বেঁধেছে পুর-প্রশসন।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, সম্প্রতি কলকাতা পুরনিগমের সচিবের তরফে এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি, দ্রুত যাতে এই সিদ্ধান্ত বায়স্তবায়িত করা হয়, তা নিশ্চিত করতে কলকাতা পুরনিগমের তরফ থেকে কলকাতা পুলিশের সদর কার্যালয় - লালবাজার কর্তৃপক্ষকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠি পাঠানো হয়েছে গত ২৬ নভেম্বর।
তার প্রেক্ষিতে, লালবাজারের পক্ষ থেকে শহরের প্রত্যেকটি থানায় সেই বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্ট থানাগুলিকে দেখতে হবে, যাতে সেই এলাকার সমস্ত ব্যবসায়ী নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের নামফলকটি অন্যান্য ভাষার পাশাপাশি বাংলাতেও লেখেন। ব্যবসায়ীরা এই নির্দেশ পালন করছেন কিনা, সেই বিষয়ে খোদ স্থানীয় থানার ওসি-কে নজর রাখতে বলা হয়েছে।
এই বিষয়ে পুর কর্তৃপক্ষের অবস্থান ও বক্তব্য একেবারে সোজাসাপটা। তারা বলছে, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। অথচ, এখনও কলকাতার বহু দোকান, রেস্তরাঁর নামফলক বাংলায় লেখা হয় না! কিন্তু, এবার থেকে নামফলকে অন্যান্য ভাষা থাকলেও বাংলা অবশ্যই রাখতে হবে। এই নীতির বাস্তবায়ন ঠিক মতো হচ্ছে কিনা, সেদিকে কলকাতা পুরনিগমের পাশাপাশি কলকাতা পুলিশও নজর রাখবে।
কলকাতা পুরনিগম সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, গত ২৬ অক্টোবর আয়োজিত মাসিক পুর অধিবেশনে শহরের ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি বিশ্বরূপ দে একটি প্রস্তাব পেশ করেন। তাতে তিনি বলেন, বাংলা ভাষা ইতিমধ্যেই ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই, পুরনিগম এলাকায় সমস্ত সরকারি, বেসরকারি ক্ষেত্রে যাবতীয় সাইন বোর্ডে বাংলা ভাষা থাকা উচিত।
এর পাশাপাশি, পুরসভার নথি-সহ সব রকম চিঠিপত্র ও বিজ্ঞপ্তিও বাংলাতেই লেখা উচিত বলেও বিশ্বরূপ দে তাঁর প্রস্তাবে তুলে ধরেন। তাতে মেয়র ফিরহাদ হাকিমও সম্মতি দেন। এরপরই এই প্রস্তাব কার্যকর করতে পুরসচিবের তরফে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞপ্তিটি জারি করা হয়।
প্রসঙ্গত, বাম আমলে প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের সময়েও এই ধরনের একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, শেষমেশ তার বাস্তবায়ন হয়নি। এবার যাতে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সেই বিষয়ে সচেতন রয়েছে পুর কর্তৃপক্ষ। তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন বিশিষ্ট বাঙালিরাও।