অনেকদিন ধরেই খবর আসছিল কলকাতা শহরে শিশু শ্রমিক বেড়ে যাচ্ছে। এই খবর আসার পরে তা পরখ করতে লিগ্যাল এইডের অফিসাররা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে নামেন। বৃহস্পতিবার খাস কলকাতার বউবাজারের নানা এলাকায় হানা দেয় তাঁরা। আর সেই হানায় তাঁদের হাতে উঠে আসে ১৭ জন শিশু শ্রমিক। তৎক্ষণাৎ তাদেরকে উদ্ধার করল পুলিশ। এই শিশু শ্রমিকদের বয়স ১০–১৪ বছরের মধ্যে বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই আলোড়ন পড়ে গিয়েছে।
বাংলায় এখন শিশু শিক্ষার হার বেড়েছে। মিড–ডে মিল পায় শিশুরা স্কুলে গেলে। তার উপর বই–খাতা থেকে শুরু করে সরকারি স্কুলগুলি সবুজ সাথীর সাইকেল পর্যন্ত পাওয়া যায়। উচ্চশিক্ষার জন্য ট্যাব থেকে শুরু করে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড সব ব্যবস্থা আছে। তাহলে শিশু শ্রমিক বাড়ছে কেন উঠছে প্রশ্ন। এই শিশু শ্রমিকদের সকলেরই বাড়ি বিহার রাজ্যে। এটা জানতে পেরেই কলকাতা শহরে লিগ্যাল এইডের অফিসাররা পুলিশের সাহায্য নিয়ে এই অভিযান চালায়। তখন নানা হোটেল–সহ কয়েকটি ছোট কারখানা থেকে এই শিশু শ্রমিকদের উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন: প্রথম শ্রেণি থেকেই এবার চালু সেমেস্টার, আগামী শিক্ষাবর্ষে কার্যকর ক্রেডিট পয়েন্ট সিস্টেম
ওই শিশু শ্রমিকদের পদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। তার পর তাদের হোমে পাঠানো হয়। আপাতত হোমে থেকে তারা পড়াশোনা করবে। নতুন জীবন শুরু করবে। তারপর দেখতে হবে তাদের বাড়ি পাঠানো যায় কিনা। এই শিশু শ্রমিকদের কারা কাজে লাগিয়েছে? বাবা–মা কোথায় থাকে? এইসব এখন খুঁজে দেখা হচ্ছে। উদ্ধার হওয়া শিশুদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারেও পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। আর অভিযুক্ত ফ্যাক্টরির এবং হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে লিগ্যাল এইড জানিয়ে দিয়েছে।
গতকাল এই শিশু শ্রমিকদের উদ্ধার করার পর তাদের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেছেন লিগ্যাল এইডের অফিসাররা। সেখান থেকে খানিকটা তথ্য জোগাড় করেছেন তাঁরা। শিশু শ্রমিকরা পুলিশ এবং লিগ্যাল এইডের অফিসারদের জানায়, অভাবের জেরেই বাড়ির লোকজন তাদের কলকাতায় এনে কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। মাসে অল্প টাকা হাতে পেয়ে সেটা বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। আর এখানে দু’বেলা পেট ভরা খাবার মেলে। তাই ১২ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হয়। এই বিষয়ে লিগ্যাল এইডের সচিব তথা বিচারক মৌ ঘটক মজুমদার বলেন, ‘এই অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে এমন অভিযান জারি থাকবে। আর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।’