মুখে কালো মাস্ক। মাথায় টুপি। এটিএম প্রতারণার তদন্তে নেমে পুলিশের হাতে এসেছে এরকমই একজনের ছবি। তা ধরা পড়েছে দিল্লির বসন্তকুঞ্জ ও মুনিরকা মহিপালপুর এলাকার এটিএম কিয়স্কের সিসিটিভি ফুটেজে। তাকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
গত রবিবার এটিএম প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়েছিল। তারপর থেকে যত সময় যাচ্ছে, তত পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অভিযোগের সংখ্যা। রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন শহরবাসী। সেই আতঙ্কের ছবিটা আজ সকাল থেকে ধরা পড়ে যাদবপুর এলাকার অধিকাংশ ব্যাঙ্কের সামনে। গ্রাহকদের হাতে পাসবুক। চোখেমুখে উৎকণ্ঠার ছাপ। ভিড়ের মধ্যে দাঁড়ানো মুখগুলির একটাই চিন্তা, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা গায়েব হয়ে যায়নি তো !
এরইমধ্যে আজ চারু মার্কেট থানাতেও একই কায়দায় এটিএম প্রতারণার ১৪টি অভিযোগ জমা পড়েছে। সঙ্গে রযেছে যাদবপুর থানার ৩১টি অভিযোগ। প্রায় ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া বলে জানিয়েছে পুলিশ। আজ বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট সিপি (ক্রাইম) মুরলীধর শর্মা জানান, দুটি থানায় দুটি মূল এফআইআর দায়ের করে তদন্ত চলছে। ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার হাতে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে একটি দল দিল্লিতে পাড়ি দিয়েছে বলে জানান জয়েন্ট সিপি (ক্রাইম)। হাতে এসেছে কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজও। তদন্তে সাহায্য নেওয়া হচ্ছে দিল্লি পুলিশেরও। তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, এটিএমে স্কিমার লাগিয়ে গ্রাহকদের তথ্য চুরি করে দিল্লি থেকে টাকা তোলা হচ্ছে। ঘটনায় রোমানিয়ান-তুরস্কের গ্যাং জড়িয়ে রয়েছে বলে তাঁদের ধারণা।
প্রতারণা চক্রের হদিশ পেতে এথিক্যাল হ্যাকার, সাইবার বিশেষজ্ঞদেরও সাহায্য নিচ্ছে লালবাজার। পাশাপাশি, এটিএমে নজরদারি চালানোর জন্য গত বছর যে বিশেষ পেট্রোলিং দল তৈরি হয়েছিল, তা ফের চালু করা হচ্ছে বলে জানান জয়েন্ট সিপি (ক্রাইম)। প্রতিটি থানায় থাকবে সেই দল। দিনে অন্তত দু'বার সংশ্লিষ্ট থানা এলাকার বিভিন্ন এটিএম পরীক্ষা করে দেখবে তারা। কোনও স্কিমার লাগানো হয়েছে কি না বা কোনও সন্দেহজনক কিছু রয়েছে, তা খতিয়ে দেখবে।
ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলোচনা করে পুলিশ। জয়েন্ট সিপি (ক্রাইম) জানান, গতকাল ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, "গত বছর এটিএম প্রতারণার পর ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল। একাধিক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল তাঁদের। অনেক ব্যাঙ্কই সেইমতো কাজ করেছে। কার্ড পরিবর্তন হয়েছে। এটিএমে অ্যান্টি স্কিমিং ডিভাইস লাগানো হয়েছে। প্রতিটি এটিএমে নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু, আমরা জানতে পেরেছি, শহরে এখনও নিরাপত্তারক্ষী-বিহীন এটিএম রয়েছে। সেই সংখ্যাটা ২৫০-র কাছাকাছি।" পুলিশের নির্দেশ মতো ব্যাঙ্কগুলি কী কী পদক্ষেপ করল, সেই সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট আগামী বছর ১ জানুয়ারির মধ্যে জমা দিতে হবে বলে জানান জয়েন্ট সিপি (ক্রাইম)।
এটিএম জালিয়াতি রুখতে সাধারণ মানুষকেও সতর্ক পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, "অনেকেই পিন পরিবর্তন করেন না। অন্তত ছ'মাস ছাড়া এটিএমের পিন পরিবর্তন করুন।"