আংশিক লকডাউনের মধ্যেও রেস্তরাঁ খোলা? দোকানের সামনেও নেহাত ছোটো লাইন নয়। কিন্তু চারু মার্কেট থানা থেকে একটু দূরেই কীভাবে খোলা আছে রেস্তরাঁ? কিছুটা এগিয়ে যেতেই পুরো বিষয়টা স্পষ্ট হল।
রেস্তরাঁর সামনে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন জনা পঞ্চাশেক-ষাটেক মানুষ। তাঁদের হাতে খাবারের প্যাকেট তুলে দিচ্ছেন রেস্তরাঁর ম্যানেজার দেবায়ন রায়। ছিলেন দেবায়নের স্ত্রী তথা রেস্তোরাঁর মালিক সোমাশ্রী সেনগুপ্তও। যাঁরা করোনাভাইরাস-কালে গত বছর অগস্টে সার্দান অ্যাভিনিউয়ে মেনকা সিনেমার কাছে নিজেদের রেস্তরাঁ ‘ওকিস’ (Wok'ies) চালু করেন। সেইসময় করোনার দাপট কিছুটা কমলেও দিন আনি-দিন খাই মানুষদের সংসারের যন্ত্রণা ছিটেফোঁটা লাঘব হয়নি। চোখের সামনেই সেইসব দৃশ্য দেখে সোমাশ্রী এবং দেবায়ন ভেবে নেন, ‘কিছু তো সমাজকে ফিরিয়ে দিতে হয়।’
সেইমতো কাজ শুরু। গত ২৯ এপ্রিল থেকে রেস্তোরাঁ থেকে রোজ এলাকার দুঃস্থ মানুষদের হাতে বিনামূল্যে খাবার তুলে দিতে শুরু করেন। টালিগঞ্জ, সার্দান অ্যাভিনিউয়ের অনেক দুঃস্থ মানুষ আছেন। তাঁদের খাবার দেওয়া হয়। টালিগঞ্জ বস্তির অনেকে আসেন। শিবমন্দিরের কয়েকজন বিশেষভাবে সক্ষম মানুষদের হাতেও খাবার তুলে দিতে থাকেন স্বামী ও স্ত্রী। যাঁরা আমদানি-রফতানির ব্যবসা ছেড়ে কলকাতায় থাকতে শুরু করেছেন। সোমাশ্রী জানান, প্রতিদিন কুপন দেওয়া হয়। সেইমতো পরদিন রান্না করা হয় এবং করোনা-বিধি মেনেই তুলে দেওয়া হয় খাবার প্যাকেট। মেনুতে কোনওদিন সয়াবিন, কোনওদিন ডিম রাখা হচ্ছে।
তারইমধ্যে অবশ্য গত ১৫ মে থেকে কার্যত লকডাউন শুরু হয়েছে। সরকারি নিয়মের জন্য আপাতত বন্ধ রাখতে হচ্ছে রেস্তোরাঁ। তবে যে মানুষরা তাঁদের দিকে তাকিয়ে অনেকটা ভরসা পান, তাঁদের কথা ভুলে যাননি সোমাশ্রী এবং দেবায়ন। রোজ রেস্তোরাঁ খুলে দুঃস্থ মানুষদের হাতে খাবার তুলে দেন তাঁরা। সোমাশ্রী জানান, আপাতত রেস্তোরাঁর কোনও কাজকর্ম চলছে না। শুধুমাত্র দুঃস্থদের হাতে খাবার তুলে জন্য দেওয়ার রোজ সকালে খোলা হচ্ছে রেস্তোরাঁ। খাবার তুলে দেওয়ার পর সরকারি নিয়ম মেনে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
দেবায়ন জানান, স্বামী-স্ত্রী'র উদ্যোগ দেখে প্রথম থেকেই অনেকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু কোনও অনুদান গ্রহণ করা হয়নি। একেবারেই নিজেদের উদ্যোগে কয়েকজনের ভরপেট খাওয়ার দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় আপাতত কেউ অনুদান দিতে চাইলে গ্রহণ করা হচ্ছে। কয়েকজন সাহায্যও করেছেন। আর তাতে ভর করেই এগিয়ে চলেছে স্বামী-স্ত্রী'র সেই উদ্যোগ। রবিবারও ৭১ জন মানুষের হাতে খাবার তুলে দেওয়া হয়েছে। সোমাশ্রীর কথায়, ‘এভাবে যদি আমরা নিজেদের এলাকার মধ্যে সাহায্য করতে পারি, তাহলে অসংখ্য মানুষের লাভ হবে। ’
বিশেষ দ্রষ্টব্য : কেউ সাহায্য করতে চাইলে ৯৬৭৪৬১৭৯৩৮ (9674617938) নম্বরে GPay বা Paytm করতে পারেন।