আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে জুনিয়র চিকিৎসকদের লাগাতার (পূর্ণ এবং আংশিক) কর্মবিরতির জেরে যে রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা তার স্বাভাবিক ছন্দ হারিয়েছে, এমন অভিযোগ গত প্রায় তিনমাসে (৯ অগাস্ট তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার অপমৃত্যুর পর থেকে) বারবার উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে, যে সরকারি চিকিৎসকরা জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনে 'পাশে দাঁড়িয়ে' সরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন, তাঁরাই নাকি ওই একই সময়ের মধ্যে চুটিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেছেন।
ফলত, এই আন্দোলনের জেরে মূলত গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষ, যাঁদের আরজি করের ঘটনার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই, তাঁরাই তাঁদের প্রাপ্য ও ন্যায্য চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে।
অথচ, যাঁদের অর্থ রয়েছে, যাঁরা একেবারেই সরকারি চিকিৎসা পরিষেবার উপর নির্ভরশীল নন, তাঁরা কিন্তু অর্থের বিনিময়ে বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রয়োজনীয় সমস্ত পরিষেবাই পাচ্ছেন। এবং সেই পরিষেবা প্রদান করেই নাকি মোটা অর্থ রোজগার করছেন সরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতির সমর্থক চিকিৎসকরা।
এবার এই বিষয়টি নিয়েই সোশাল মিডিয়ায় সরব হলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষ। সৌজন্যে বর্তমান পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন।
ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, 'কর্মবিরতির এই অচলাবস্থা শুধু সরকারি ক্ষেত্রে।' যে সরকারি চিকিৎসকরা আন্দোলন ও সরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতির পক্ষে সুর চড়িয়েছেন, তাঁরাই নাকি গত ৯ অগাস্ট থেকে ১৭ অক্টোবরের মধ্যে চুটিয়ে প্র্যাকটিস চালিয়েছেন বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে।
বর্তমান পত্রিকার দাবি, এমনই ৫৬৩ জন সরকারি সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তারের তালিকা সংগ্রহ করেছে তারা।
এই বাংলা দৈনিক পত্রিকার তরফে আরও দাবি করা হয়েছে, গত ৯ অগাস্ট থেকে ১৭ অক্টোবরের মধ্য়ে সংশ্লিষ্ট ৫৬৩ জন সরকারি সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তার বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ৭৩ হাজার ৯০৫ বার পরিষেবা দিয়েছেন। অর্থাৎ, তাঁরা অর্থের বিনিময়ে রোগী দেখেছেন অথবা অস্ত্রোপচার করেছেন।
বর্তমান পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, প্রায় ৭৪ হাজার বার এই পরিষেবা প্রদান করা হয়েছে কেবলমাত্র স্বাস্থ্যসাথীতে নথিভুক্ত উপভোক্তাদের জন্য। যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট '৫৬৩ জন এসআর (বন্ডের শর্তে নিযুক্ত জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ) রোজগার করেছেন ৫৪ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা। গড় হিসেব প্রায় ১০ লক্ষ টাকা।'
ওই প্রতিবেদনে আরও তুলে ধরা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা ওই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই 'স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় নথিভুক্ত ‘কেস’ ছাড়াও রোগী দেখেছেন। পারিশ্রমিকও পেয়েছেন। একইসঙ্গে রয়েছে মাসে ৬৫ থেকে ৭৫ হাজার টাকার সরকারি ভাতা, যা এমডি, এমএস পাশ করে সরকারি হাসপাতালে যোগ দেওয়ার পর তাঁরা পেয়ে থাকেন। তার হিসেব কিন্তু ৫৪ কোটি ৩৯ লক্ষের মধ্যে ধরা হয়নি।'
বর্তমান পত্রিকার এই প্রতিবেদন উল্লেখ করে সোমবার ফেসবুকে দু'টি পোস্ট করেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। সেই একই পোস্ট তিনি তাঁর এক্স হ্যান্ডেলেও করেছেন।
সঙ্গে মাত্র কয়েকটি শব্দে বিশেষ বার্তা দিয়েছেন কুণাল। তাঁর দাবি, বর্তমান পত্রিকায় যে তথ্যাবলী তুলে ধরা হয়েছে, তার সত্যাসত্য অবশ্যই যাচাই করে দেখা উচিত। এর জন্য প্রথমেই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন কুণাল। পাশাপাশি, তদন্তে এই তথ্য়াবলী সত্যি প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট সরকারি চিকিৎসকদের চিহ্নিত করারও দাবি তুলেছেন তিনি।
একইসঙ্গে, নেট নাগরিকদের ওই প্রতিবেদন পড়ে দেখারও বার্তা দিয়েছেন কুণাল ঘোষ।