আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটায় ৫ বছরের শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ এবং তার জেরে অভিযুক্ত প্রতিবেশীকে পিটিয়ে খুনের ঘটনা প্রসঙ্গে সরব হলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। দিলেন সমাজ সংস্কারের বার্তা।
শনিবার সকালে কুণাল তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে এই প্রসঙ্গে একটি পোস্ট করেন। তাতে ফালাকাটায় ওই শিশুর উপর হওয়া পৈশাচিক অত্যাচারকে 'জঘন্য' বলে ধিক্কার জানান তিনি।
একইসঙ্গে তাঁর এই পোস্টে কুণাল বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছেন। যথা - 'ধর্ষণ, খুনের ঘটনা, জঘন্যতম অপরাধ, ফাঁসি, গ্রেপ্তার, ধিক্কার, আন্দোলন, মিডিয়ার প্রচার, সোশ্যাল মিডিয়ার সক্রিয়তার পরেও থামে না কেন?'
'ধনঞ্জয় বলুন, বা দিল্লির নির্ভয়ার খুনিরা, ফাঁসি দিয়েও সমাজে এই বিকৃত রোগটা কমানো যায় না কেন? শুধু বাংলা নয়, সারা দেশে ঘটছে, অতীতে বাংলাতে আরও বেশি ঘটত, এটা কেন?'
'এই যে আরজিকর নিয়ে এত প্রতিবাদ, প্রচার, তার পরেও বিক্ষিপ্ত, বিচ্ছিন্ন এই ঘটনা ঘটে কী করে? তাহলে কি এসব প্রতিবাদ সেই পশুদের স্পর্শ করে না?'
এরপর কার্যত নিজেই সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন কুণাল ঘোষ। তাঁর ব্যাখ্যা - 'এই প্রবৃত্তি শুধু পুলিশ দিয়ে, ফাঁসি দিয়ে থামানো যায় না, অতীত থেকে প্রমাণিত, তাহলে? এটা রাজনীতির উপাদান না, সমাজের চিন্তার বিষয়। এক নাবালিকা যদি তার পরিচিত বয়ঃজ্যেষ্ঠের কাছে নিরাপদ থাকতে না পারে, তাহলে এই সমাজ কোন দায়িত্ব পালন করছে? শুধু একে অপরের দিকে আঙুল তোলার? ছিঃ।'
প্রসঙ্গত, আলিপুরদুয়ারের ঘটনা ঘটার পর খুব স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের নারী নিরাপত্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে ফের একবার প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন বিরোধী বিভিন্ন দলের রাজনীতিকরা।
এদিকে, ফালাকাটার ঘটনা সম্পর্কে যেটুকু তথ্য সামনে এসেছে, তা হল - নিহত শিশুকন্যার বাবা-মা যখন মাঠে চাষের কাজে ব্যস্ত ছিলেন, তখনই প্রতিবেশী এক ব্যক্তি তাকে নিজের ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে তার উপর অত্যাচার করেন বলে অভিযোগ।
পরবর্তীতে শিশুটির দেহ উদ্ধার হলে জানা যায়, নিহত শিশুকে শেষবার ওই প্রতিবেশীর সঙ্গে দেখা গিয়েছিল এবং তাঁর ঘর থেকে শিশুটির কান্নার শব্দও শোনা গিয়েছিল।
এর জেরে স্থানীয় বাসিন্দারা ধরে নেন, ওই প্রতিবেশীই শিশুটিকে নিগ্রহ করেছেন এবং তাকে খুন করেছেন। এরপরই শুরু হয় গণপিটুনি এবং তার ফলস্বরূপ আরও একটি মৃত্যু।
এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি আদৌ দোষী কিনা, তা জানার অপেক্ষা না করে, ঘটনার আইনত তদন্ত ও বিচারের অপেক্ষা না করে, কেন গ্রামের বাসিন্দারা আইন হাতে তুলে নিলেন? তাহলে কি পুলিশ প্রশাসন ও আইনের উপর মানুষ আর ভরসা রাখতে পারছে না?
স্বাভাবিকভাবেই এই ইস্যুটিকে হাতিয়ার করে রাজ্য প্রশাসনকে দুষছে বিরোধীরা। সেই প্রেক্ষাপটে কুণালের এই পোস্ট সমাজ সংস্কারের বার্তা দিচ্ছে।
মনোবিদ ও সমাজ বিজ্ঞানীরাও একথা বহুবার বলেছেন যে ধর্ষণ একটি সামাজিক ব্যধি এবং এর জন্য সামাজিক সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। কুণালও সেকথাই বলেছেন।
তবে, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের আরও বক্তব্য - ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত না হলেও এ নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগ সমস্ত রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধেই ওঠে! কোনও দলই তার ব্যতিক্রম নয়।
আর ধর্ষণ সামাজিক ব্যধি হওয়ার পাশাপাশি আইনত ভয়ঙ্কর অপরাধও বটে। সেক্ষেত্রে অপরাধীরা কেন আইনের ভয় পাচ্ছে না, সেই প্রশ্নও উঠছে।