কালীঘাটের বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পরে হাউ-হাউ করে কেঁদে ফেললেন দুই জুনিয়র ডাক্তার। ভিডিয়ো নিয়ে জটের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পরে তাঁরা হতাশায় ভেঙে পড়েন। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের কাছেই কাঁদতে-কাঁদতে এক জুনিয়র চিকিৎসক বলেন, ‘ওঁনারা দরজাটা বন্ধ করে দিলেন।’ সেইসঙ্গে তাঁদের ‘মুখের উপর দিয়ে' রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মুখ্যসচিব মনোজ পন্তরা ‘গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন’ বলেও আক্ষেপ প্রকাশ করতে থাকেন তিনি। কাঁদতে-কাঁদতে তিনি বলেন, 'আমরা এখনও (বৈঠকে) বসতে চাই। আমরা এখনই (বৈঠকে) বসতে চাই।'
‘এই বিচারের রাস্তায় আমাদের কিছুটা আশার আলো দেখান’
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসার জন্য তাঁরা যে কতটা নমনীয় হয়েছিলেন, সেটাও জানিয়েছেন ওই জুনিয়র ডাক্তার। চোখের জলে তিনি বলতে থাকেন, ‘শেষে আমরা শুধু বৈঠকের কার্যাবিবরণী নথিভুক্ত করার প্রস্তাবেও রাজি ছিলাম। (আর্জি ছিল) যে কথা বলুন, কথা বলুন আমাদের সঙ্গে। আমাদের এসে বিচারটা দিন। এই বিচারের রাস্তায় আমাদের কিছুটা আশার আলো দেখান। তাও ওঁনারা ওটা শুনলেন না।’
‘মুখের উপর দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন'
তাঁকে দেখে জলের চোখ সামলাতে পারেননি অপর এক জুনিয়র ডাক্তার। তিনি বলেন, ‘বললেন যে তোমরা নিজেরা চলে যাও। নাহলে বাস ডেকে দিচ্ছি। আমাদের বললেন যে তোমাদের আর এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কোনও লাভ নেই। অনেক সময় পেরিয়ে গিয়েছে। তোমরা ভিতরে এসো। নাহলে বাসে যাও।’ তারইমধ্যে প্রথম জুনিয়র ডাক্তার বলেন, ‘আমাদের মুখের উপর দিয়ে ওঁনারা গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন। বললেন যে বাস ডেকে বেরিয়ে যাও।’
‘ম্যাডামের রেসপেক্টটা….’
হাউ-হাউ করে কাঁদতে-কাঁদতে তিনি আরও বলেন, ‘ম্যাডামের (মুখ্যমন্ত্রী) রেসপেক্টটা রেখে আমরা সবকিছু মানতে রাজি ছিলাম। ম্যাডামের চেয়ারের রেসপেক্টের জন্যই আমরা সবকিছু মানতে রাজি ছিলাম। আমরা এটাও মেনে নিয়েছিলাম যে ঠিক আছে, ভিডিয়ো করতে হবে না। আমরা আপনার উপরে ভরসা রাখছি। আপনার অনুরোধ রেখে আপনার কাছে যাচ্ছি আমরা। আপনি শুধু আমাদের দাবিগুলি শুনে কিছু সুরাহা করে দিন। এটুকুই তো শুধু আমাদের দাবি ছিল।’
সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শেষে বললেন, উনি তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন। আর অপেক্ষা করবেন না। আমরা ৩৫ দিন ধরে অপেক্ষা করছি। আমরা জানি না যে (আগামিদিনে) কী হবে। আমরা প্রচণ্ড হতাশ। আমরা এখনও বসতে চাই। আমরা এখনই বসতে চাই।’
শেষপর্যন্ত সেই বৈঠক আর হয়নি
যদিও শেষপর্যন্ত সেই বৈঠক আর হয়নি। কালীঘাট থেকে একরাশ হতাশা নিয়ে বাসে করে সল্টলেকে নিজেদের অবস্থান মঞ্চের দিকে রওনা দেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন যে যতদিন না দাবিপূরণ হবে, যতদিন না আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসক বিচার পাচ্ছেন, ততদিন আন্দোলন চলবে। তাঁরা ৩৫ দিন রাস্তায় থেকেছেন। আরও ৩৫ দিন থাকতেও ভয় পান না বলে দাবি করেন জুনিয়র ডাক্তাররা।