গত বছরের অগস্টে বহু চর্চিত আরজি কর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা হোক, কিংবা হালের গিরীশ পার্ক এলাকায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে যুবকের রহস্যমৃত্যু - বারবার কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে কলকাতা পুলিশকে। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথভাবে তদন্ত না করা, তদন্তে গাফিলতি করার মতো একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এবং এমন ঘটনা লাগাতার ঘটেই চলেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র গত তিন মাসেই শহরে এমন পাঁচটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাা ঘটেছে, যার তদন্ত প্রক্রিয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে কলকাতা পুলিশের কর্মদক্ষতা। এতে পুলিশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
এই প্রেক্ষাপটে শহরে যেকোনও জায়গায় যদি কোনও অস্বাভাবিক মৃত্যু বা রহস্যমৃত্যুর ঘটনা ঘটে, কিংবা কোথাও যদি খুনের অভিযোগ ওঠে, তাহলে ঠিক কীভাবে তদন্ত শুরু করতে এবং তা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, তা নিয়ে নয়া নির্দেশিকা জারি করল কলকাতা পুলিশের সদর কার্যালয় - লালবাজার।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, আসলে এই ধরনের ঘটনায় কোনওভাবেই যাতে কলকাতা পুলিশের তদন্তে কোথাও কোনও ফাঁক রয়েছে বলে অভিযোগ তোলার অবকাশ না থাকে, সেটাই নিশ্চিত করতে চাইছেন পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। আর সেই কারণেই কলকাতা পুলিশ কমিশনারেটের একেবারে শীর্ষস্তর থেকে এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
কী কী নির্দেশ রয়েছে ওই নির্দেশিকায়?
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার থেকে কোনও অস্বাভাবিক মৃত্যু বা রহস্যমৃত্যুর খবর এলেই -
সংশ্লিষ্ট থানা থেকে যত দ্রুত সম্ভব ঘটনাস্থলে পুলিশ আধিকারিকদের পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে একটুও দেরি করা চলবে না। থানা থেকে যে আধিকারিক ঘটনাস্থলে যাবেন, সেখানে পৌঁছানোর আগে পর্যন্ত ঘটনা সম্পর্কে তাঁর কাছে যতটুকু তথ্য থাকবে, তার পুরোটা সেই থানার ওসি এবং গোয়েন্দা বিভাগকে জানাতে হবে।
যদি কোনও জায়গা থেকে থানায় দেহ উদ্ধারের খবর আসে, তাহলে যে অফিসার সেই খবর পাবেন, তাঁকে বাধ্যতামূলকভাবে সেই ঘটনার একটি জেনারেল ডায়ারি (জিডি) করতে হবে। এবং তাতে প্রাথমিকভাবে পাওয়া সমস্ত খুঁটিনাটি তথ্য সংযোজিত করতে হবে।
এরপর যে পুলিশ আধিকারিক, আইও বা তদন্তকারী আধিকারিক হিসাবে ঘটনাস্থলে যাবেন, তাঁকেও একগুচ্ছ নির্দেশ মেনে চলতে হবে। যেমন - প্রথমেই তাঁকে নিহত বা মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
জানতে হবে, পরিবারের সদস্যরা আলাদা করে কোনও অভিযোগ জানাতে চান কিনা, চাইলে সেই অভিযোগ গ্রহণ করতে হবে।
যাঁরা শহরে একলা থাকেন, তাঁদের কারও মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে প্রতিবেশী বা স্থানীয় আত্মীয় বা স্থানীয় অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের কাছেও জানতে হবে, তাঁরা কেউ এই ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করতে চান কিনা।
এই পুরো প্রক্রিয়া সারার পর থানায় ফিরে এফআইআর দায়ের করতে হবে এবং তদন্ত শুরু করে সেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
এই ধরনের ঘটনায় মৃতদেহের ময়নাতদন্ত অত্যন্ত দ্রুত সারতে হবে। কোনও গড়িমসি করা চলবে না। যেসমস্ত বিভাগ এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত, তাদের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করতে হবে।
যদি মৃত বা নিহত ব্যক্তির পরিচয় না জানা যায়, তাহলে তা জানার জন্য সবরকম চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে অন্যান্য থানা, এমনকী অন্য়ান্য জেলার পুলিশের সাহায্য নিতে হবে।
লালবাজারের তরফে জারি করা এই নয়া নির্দেশিকা ঠিক মতো মানা হচ্ছে কিনা, সেই বিষয়ে নজরদারি চালাবেন প্রতিটি ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার। আর যদি কোনও অফিসার এই নির্দেশিকা মানতে সামান্যতম ভুল করেন, তাহলে তাঁকে বিভাগীয় তদন্তের মুখে পড়তে হবে।