করোনাভাইরাসের সময় লকডাউন চলেছিল। মানুষের রুজি–রোজগারে টান পড়ে ছিল। তাই মানুষের খাবার জোগাড় করা দুর্বিষহ হয়ে যায়। তখন কেউ যাতে অভুক্ত না থাকেন সেটার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শে শহরের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে মা–ক্যান্টিন চালু করেছিল কলকাতা পুরসভা। কিন্তু করোনাভাইরাস এখন অতীত। তবে এখনও মা–ক্যান্টিন রমরমিয়ে চলছে। যতদিন যাচ্ছে তত ভিড়ও বেড়ে চলেছে সেখানে। অফিসযাত্রীরা সেখানে এসে খেয়ে নিচ্ছেন। আর শহরের নিম্নবিত্ত মানুষজনও সেখান থেকে ৫ টাকায় খাবার সংগ্রহ করছেন। সুতরাং খরচের বহর বেড়ে গিয়েছে। আর তার জেরে হিমশিম খাচ্ছে কলকাতা পুরসভা।
এখন প্রত্যেক বাজারে শাক–সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। আলুর দাম বিস্তর ধরপাকড়ের পরও কমল না। বরং বেড়ে গিয়েছে। ডিমের দাম হঠাৎ বেড়ে গেল। তাই মা ক্যান্টিনে মাত্র ৫ টাকায় ভাত, ডাল, সবজি, ডিম দেওয়া বেশ চাপের হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই খাবার মানুষের মুখে তুলে দিতে খরচ হয় ২৫–৩০ টাকা প্রতি প্লেট। বাড়তি খরচ রাজ্য সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, মা ক্যান্টিন প্রথম যখন চালু হয়েছিল তখন এক–একটি ক্যান্টিনে ১০০টি করে প্লেট বরাদ্দ ছিল। পরে বাড়িয়ে ১৫০ করা হয়। কিন্তু এখন সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০০ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: চেয়ার ফাঁকা রেখেই চলল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন, আচার্যের বদলে এল কে?
এখন বাজার দরের দিকে তাকিয়ে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার বাড়িতে একবেলা রান্না করা ছেড়ে দিয়েছে। মা ক্যান্টিন থেকে খাবার সংগ্রহ করে এই লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাচ্ছে। এই বিষয়ে মেয়র পারিষদ (সমাজকল্যাণ) মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মা ক্যান্টিনে ভিড় বেড়েই চলেছে। তাই অনেক কাউন্সিলর প্লেটের সংখ্যা বাড়াতে বলছেন। কিন্তু যেহেতু টাকা রাজ্য সরকার দেয়, তাই আমরা চাইলেই বাড়াতে পারব না।’ এই নিয়ে বেশ উদ্বেগ বেড়ে গিয়েছে কলকাতা পুরসভার। আর কলকাতা পুরসভার ১০৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারকেশ্বর চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘আমার ওয়ার্ডে যে মা ক্যান্টিন রয়েছে সেখানে এখন ১৫০ জনের খাবারের ব্যবস্থা আছে। প্রতিদিনই খাবার শেষ হয়ে যায়।’
কলকাতা পুরসভার কর্তারা হিসেব করে দেখছেন, আগের থেকে অনেক খরচ বেড়ে গিয়েছে মা ক্যান্টিনে। তাই বিষয়টি নিয়ে নজরদারি শুরু হয়েছে। সম্প্রতি একটি নির্দেশিকাও জারি করেছেন পুরসভার কমিশনার। সেখানে বলা হয়েছে, কত প্লেট খাবার বিলি হল, সেই সংখ্যা পরের দিন বেলা ১২টার মধ্যে কলকাতা পুরসভার পোর্টালে নথিভুক্ত করতেই হবে। প্রত্যেক মাসে খরচের হিসাব পেশ করতে হবে বরো অফিসারকে। আর স্টকে কতটা চাল, ডাল, ডিম আছে সেটাও রোজকার হিসাব জমা করতে হবে। এই বিষয়ে এক পুরকর্তার কথায়, ‘মা ক্যান্টিনে যাঁরা খেতে আসেন তাঁদের সবাই যে গরিব সেটা নয়। এমনকী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী পর্যন্ত দুপুরের খাবার নিচ্ছেন। অনেকে বাড়িতে রান্নার ঝামেলা কমাতে খাবার নেন।’