যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্রের র্যাগিংয়ে মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চয়ই সকলের মনে আছে। বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিল নদিয়ার ছেলেটি। কিন্তু উচ্চশিক্ষা আর নেওয়া হয়নি। কারণ জীবনে নেমে এসেছিল মর্মান্তিক কালো রাত। গোটা বাংলায় ওই ঘটনায় আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল। সেই ঘটনার স্মৃতি আবার উসকে উঠল মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলপ্রকাশের পর। কারণ মৃত দাদার ভাইও আজ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ। কিন্তু দাদার কথা সে ভুলতে পারেনি। পরীক্ষার ফলপ্রকাশের পর তাই তার প্রতিক্রিয়া, ‘আজ খুব মনে পড়ছে অঙ্কের জটিল সমস্যা সহজ করে দিত দাদা। এখন দাদা নেই। কিন্তু ঘরের চারপাশে ওর বইখাতা পড়ে আছে। যা মনে করাচ্ছে অনেক কিছু।’
মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলপ্রকাশ হতেই সবাই প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়–সহ সাফল্য পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ব্যস্ত। অথচ আলোকবৃত্তের বাইরে রইল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত ছাত্রের ভাই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে প্রাণ দিতে হয়েছিল। বড় ছেলে আজ নেই। সেই স্মৃতি রয়ে গিয়েছে পরিবারে। শোক আজও কাটেনি। নদিয়ার বগুলা থেকে কলকাতায় উচ্চশিক্ষা লাভের আশায় এসেছিল ওই পড়ুয়া। কিন্তু নির্মম পরিণতির শিকার হতে হয়েছিল। অপরাধীরা জেলে গিয়েছে। কিন্তু এক বৃহস্পতিবার বড় ছেলেকে হারিয়েছিল পরিবার। আর এক বৃহস্পতিবার ছোট ছেলে মাধ্যমিক পাশ করল। তা নিয়ে তার বাবার প্রতিক্রিয়া, ‘আজকের দিনে বড় ছেলেটা থাকলে খুব আনন্দ করত। ছোট ভাই বিরিয়ানি রান্না করে খাওয়াত। কিন্তু সব শেষ।’
আরও পড়ুন: তৃণমূল কংগ্রেসের মিছিলে স্কুল পড়ুয়ারা! অভিযোগ উঠতেই জয়নগরে তুমুল রাজনৈতিক তরজা
সময়ের গতিতে আর এই মায়ার সংসারে অনেকেই হয়তো ভুলতে বসেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই মর্মান্তিক স্মৃতি। একটু বাঁচতে চেয়েছিল নিষ্পাপ ছেলেটি। কিন্তু সেটাও তাকে দেওয়া হয়নি। আর যে পরিবারের ছেলে চলে গেল! তাঁরা কি ভুলতে পেরেছে? এই কঠিন প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে নিহত ছাত্রের বাবা বলেন, ‘চোখের সামনে আজও ওই দিনটা ভেসে ওঠে। উচ্চশিক্ষা যাতে লাভ করে তাই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ছেলেকে পৌঁছে দিতে গিয়েছিলাম ছোট ছেলেকে নিয়ে। ক্যাম্পাসে পৌঁছে অঝোরে কেঁদে ছিলাম তিনজনেই। সেটা ছিল আনন্দের অশ্রু। সঙ্গে ছেলেকে ছেড়ে থাকার বিষয়। তবে এমন ঘটনা ঘটবে ভাবিনি।’
মাধ্যমিক পাশ করলেও দাদাকে হারানোর স্মৃতি আজও বুকে করে রেখেছে ভাই। তাই হাতে রেজাল্ট পেয়েও তার কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। একদৃষ্টে দাদার ছবির দিকে তাকিয়ে ভাই। মনের অন্দরে কোনও কথা চলছে কিনা বোঝার উপায় নেই। মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফল হয়ে ভাইয়ের মন্তব্য, ‘হাসি মুখের দাদাটা আর নেই। দাদার সঙ্গে সেই রাতে কী হয়েছিল, আজও সেটা জানতে ইচ্ছা করে। ভুলতে পারিনি। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে। তাই এখন কিছুই ভাল লাগছে না। ও থাকলে হয়তো আরও ভাল ফল করতে পারতাম। এই রেজাল্ট আজ আমার কাছে শুধুই কাগজ।’ তবে নিহত ছাত্রের বাবার স্পষ্ট বক্তব্য, ‘ছেলের বিচারের লড়াই থেমে থাকবে না।’