দুপুরে ‘নরম’ বার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দিলেন, ইতিমধ্যে অবসর নিয়েছেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামিকাল (১ জুন) থেকে তিন বছরের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করবেন তিনি। মমতা বলেন, ‘আমাদের আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে চাই। উনি অবসর নিয়েছেন। কিন্তু তাঁকে নবান্ন ছাড়ার অনুমতি দিইনি আমি।’
আলাপনবাবুকে বাংলায় কাজ করতে দেওয়ার জন্য সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দেন মমতা। সেই চিঠির রেশ ধরে সোমবার বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে রীতিমতো ক্ষুব্ধ মমতা জানান, রাজ্যের আবেদনের পর বিকেল পাঁচটার কিছুটা আগে কেন্দ্রের তরফে আলাপনকে চিঠি পাঠানো হয়। আগামিকাল সকাল ১০ টার মধ্যে আলাপনকে নর্থ ব্লকে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কী কারণে ডাকা হয়েছে, সে বিষয়ে চিঠিতে কোনও উচ্চবাচ্য করা হয়নি। অথচ মোদীকে দেওয়া চিঠির কোনও জবাব দেওয়া হয়নি। মমতা বলেন, 'প্রতিশোধমূলক কাজ। এত নির্দয়, নির্মর প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগে কখনও দেখিনি, যাঁরা মমতার বিরোধিতা করতে বলে মুখ্যসচিবকে আক্রমণ করছেন। এটা বাড়াবাড়ি। রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি।'
মমতা বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত কে নিয়েছেন? এটা বেআইনি, এটা অসাংবিধানিক। আমরা জানি না, ওঁদের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা কারা? এটা দেশের পক্ষে সত্যি বিপজ্জনক। তাঁরা শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর চুরমার করে দিচ্ছেন না, তাঁরা দেশের সর্বত্র আমলাদের মনোবলে ধাক্কা দিচ্ছেন। সরকার, জনগণের জন্য যিনি সারাজীবন প্রাণপাত করে কাজ করে গিয়েছেন, রাজ্যের সেই শীর্ষ আমলাকে এরকমভাবে অপমান করা হয়েছে। ব্যক্তিগত মত এবং রাজ্যের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা ছাড়া তাঁকে কেন্দ্রের কাজে যোগ দিতে বলা যায় না।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘এই ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। কখনও মেনে নেব না।'
তারইমধ্যে দুপুরের থেকে জল্পনা ছড়িয়েছিল, কেন্দ্রের নির্দেশ মতো সোমবার নর্থ ব্লকে না যাওয়ায় আলাপনবাবুকে শো-কজ করেছে কেন্দ্র। যদিও মমতা বলেন, ‘এসব তথ্য আমাদের কাছে নেই। যিনি ইতিমধ্যে অবসর নিয়েছেন, তাঁর ক্ষেত্রে এগুলি মনে হয় আইনত প্রয়োজ্য নয়। এসব কোনও চিঠি আমাদের কাছে আসেনি। আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে একটাই চিঠি এসেছে। সেটার বিষয়ে আপনাদের বলে দিলাম।’
সেইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, সোমবারই অবসর নিতে চেয়ে নিজেই আর্জি জানান আলাপনবাবু। মমতার কথায়, ‘ইচ্ছা করলে আমি কিন্তু ওকে এক্সটেনশন দিয়ে জোর করে বলতে পারতাম যে তুমি থেকে যাও। তাতেও কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কিছু করতে পারত না। আমি সেটা করিনি। আমার কাছে যখন ও আমাদের অনুমতি চেয়েছে, ম্যাডাম, আজ আমার শেষদিন। দয়া করে আজ আমায় অবসর নিতে দিন। আমি ওকে অবসর নেওয়ার অনুমতি দিয়েছি।’ সঙ্গে বলেন, 'ভারতের ইতিহাসে নাম লেখা থাকবে আলাপনের।'
তবে বাংলার গণ্ডিতেই সেই বিতর্ক আটকে রাখতে চাননি মমতা। দেশের সব বিরোধী রাজ্যগুলিকে এককাট্টা হওয়ার আর্জি জানান। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আমলারা কি চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক?’ সঙ্গে বিজেপি সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন, ‘পস্তাতে হবে।’