দলে বিদ্রোহ রুখতে অবশেষে নিজেই ময়দানে নামলেন মমতা। দলে থেকে দলীয় নেতা-মন্ত্রীদের সমালোচনা করা যাবে না বলে সতর্ক করলেন তিনি। শুক্রবার দলের সাংগঠনিক বৈঠকে বললেন, ‘দলে থেকে আজে-বাজে বকা যাবে না।’ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট। সম্প্রতি তৃণমূলের মুষলপর্বে ইতি টানতে দলনেত্রীর এই ওষুধ কাজ করে কি না তা দেখার।
ঘূর্ণিঝড় আমফানের পর থেকেই যেন আত্মসমালোচনার ঝড় উঠেছে তৃণমূলে। আর সব থেকে গুরুতর বিষয় হল একে অপরকে সমালোচনায় বিদ্ধ করছেন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। ঝড়ের পর কলকাতাবাসীর দুর্ভোগের জন্য প্রথম মুখ্য প্রশাসক তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন মানিকতলার বিধায়ক তথা ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পান্ডে। আমফান মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় কলকাতার কোনও বিধায়কের সঙ্গে ফিরহাদ বৈঠক করেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি। সঙ্গে কলকাতা পুরসভা পরিকল্পনাহীনভাবে কাজ করছে বলেও আওয়াজ তোলেন।
এর কয়েকদিন পরেই সাধন পান্ডেকে অপসারণের দাবি তুলে সরব হন বেলেঘাটার বিধায়ক পরেশ পাল। লকডাউন না চললে ১৫,০০০ লোক জড়ো করে সাধন পান্ডেকে তিনি উচ্ছেদ করতেন বলে দাবি করেন।
এখেনেই শেষ হয়নি তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। শুক্রবার সুন্দবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরাকে নাম না করে বেঁধেন প্রবীণ মন্ত্রী তথা বালিগঞ্জের বিধায়ক সুব্রত মুখোপাধ্যায়। আমফান বিধ্বস্ত সাগদ্বীপ পরিদর্শনে মন্ত্রী কেন যাননি তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বিধানসভা নির্বাচনের যখন আর মাত্র ১ বছর বাকি তখন তৃণমূলের মন্ত্রিসভার সদস্যদের এই কোন্দলে অন্য লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। তাদের দাবি, এমনিতে তৃণমূলে দলীয় শৃঙ্খলা একটা গবেষণার বিষয়। তবে লোকসভা নির্বাচনের পর ২০২১-এর বিধানসভায় তৃণমূলের ক্ষমতায় ফেরা যে মুশকিল তা দলের নিচুতলার কর্মীদের মতো বুঝেছেন মন্ত্রীরাও। কিন্তু মন্ত্রিত্বে থাকায় এতদিন মুখ খোলেননি তাঁরা। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচন যত এগোচ্ছে তত বেসুরো হচ্ছেন তাঁরা। তৃণমূলের জনসমর্থনের ভিত্তি টলে যাওয়ায় তার প্রভাব পড়েছে দলীয় শৃঙ্খলাতেও। সেই শৃঙ্খালাই ফেরানোর চেষ্টা শুরু করলেন মমতা।
এদিন তৃণমূলনেত্রী স্পষ্ট করেন, দলে থেকে দলীয় নেতৃত্বের প্রকাশ্যে সমালোচনা করা যাবে না। সঙ্গে সাধন পান্ডেদের মমতার বার্তা, যারা কাজ করছে না তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেবে দল।