কখনও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার দু'লাইন বাংলায় শুনিয়েছেন, কখনও আবার হিন্দিতে তর্জমা করে মনোমোহন বসুর কবিতা পাঠ করেছেন। তা নিয়ে এবার নাম না করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দাবি করলেন, কমপক্ষে ১৫ টি ভাষায় অল্পবিস্তর কথা বলতে পারেন তিনি। কিন্তু সেজন্য ‘নাটক-ড্রামা’ করতে হয় না।
মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তিনি একাধিক ভাষায় কথা বলতে পারেন। কিন্তু সেজন্য তাঁকে ‘পাবলিসিটি’ করতে হয় না। মমতার কথায়, ‘বাংলাকে তো টার্গেট করবে। বাংলার ইলেকশন আসছে না। শুনুন, আমি গুজরাতি ভাষায় কথা বলতে পারি। আর আ্মি গুজরাতি ভাষা লিখে নেব আমার ভাষায়। আমি সেটা পড়ে বক্তৃতা দেব। আমি ভিয়েতনামের ভাষা জানি। হ্যাঁ। আমি যখন ভিয়েতনামে গিয়েছিলাম। তখন আমি ভিয়েতনামের ভাষা শিখেছিলাম। আর রাশিয়ার ভাষা কিছু জানি। কারণ আমি রাশিয়ায় গিয়েছি। আমি শিখেছি একটু। আমি নাগামিজ জানি। কারণ আমি নাগাল্যান্ডে অনেকদিন কাজ করেছি। আমি মণিপুরী ল্যাঙ্গুয়েজ (ভাষা) জানি, অসমিয়া ল্যাঙ্গুয়েজ (ভাষা) জানি, আমি ওড়িয়া ল্যাঙ্গুয়েজ (ভাষা) জানি, আমি পঞ্জাবি ল্যাঙ্গুয়েজ (ভাষা), আমি মারাঠি ল্যাঙ্গুয়েজ (ভাষা) জানি, আমি বাংলা জানি। আমি হিন্দি জানি, আমি উর্দু জানি, আমি গোর্খা জানি, আমি নেপালি জানি, তাই বলে এটা নিয়ে আমি কখনও গর্ব করি না। বরং আমি গর্ব করি, যদি তাঁদের কথা আমি একটু কথা বলতে পারি।’
রবিবার ‘মন কি বাত’-এ 'আত্মনির্ভর ভারত'-এর সওয়ালের সময় ‘অখ্যাত’ মনোমোহন বসুর কবিতা শোনান মোদী। পরাধীন ভারতে স্বদেশি দ্রব্য ব্যবহারের আর্জি জানিয়ে য়ে কবিতা লিখেছিলেন তিনি। তার আগে ঋষি অরবিন্দের নামও উঠে আসে মোদীর ভাষণে। আগেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা বাংলায় বলেছিলেন। তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যথেষ্ট ট্রোলের মুখে পড়েছিলেন। যদিও রাজনৈতিক মহলের মতে, ট্রোলের থেকে বড় হল আগামী বছরের বিধানসভা ভোট। তাই বঙ্গবাসীর মন জয়ের জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঋষি অরবিন্দ, মনোমোহন বসুদের নাম বেছে নিচ্ছেন মোদী। তাতে তৃণমূল কংগ্রেসের ‘বহিরাগত’ আক্রমণও ভোঁতা করা যাবে।
সে প্রসঙ্গ একবারও উত্থাপন না করে মমতা অভিযোগ করেন, ‘পাবলিসিটি’-র জন্য এই কাজ করা হচ্ছে। মমতা বলেন, ‘এর জন্য পাবলিসিটি করার দরকার নেই। আমি কোনও রাজ্যে গেলে, ফার্স্ট সেই রাজ্যের ভাষায় কথা বলি। সুতরাং নাটক-ড্রামা অনেক হয়েছে।’ মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, 'টেলিপ্রম্পটার নিয়ে (পড়ে যাওয়া হয়)। আপনি বুঝতে পারবেন, চোখের সামনে কী আছে, কী দেখে রিডিং পড়ে যাচ্ছে পুরো। কেউ বুঝতে পারবেন না। যাঁরা জানেন, তাঁরা জানেন। টেলিপ্রম্পটারে বক্তৃতা দেওয়া আমেরিকায় আগে হয়েছে অনেকবার। ইউকে'তে (ব্রিটেনে) হয়েছে। এবার ইন্ডিয়ায় এসব দেখতে পাচ্ছি।'
নাম না করে মোদীকে চ্যালেঞ্জও ছোড়েন মমতা। বলেন, ‘কেউ একটা বক্তৃতা দিতে গেল। তার দুটি কাগজও উড়ে গেল তো, তার ভাষণও উড়ে চলে গেল। এটা অন্তর থেকে করতে হয়। কেউ করবেন নাকি চ্যালেঞ্জ। যে কোনও রাজ্যের যে কোনও ভাষা, যে ভাষাগুলি আমি আপনাদের বললাম? হ্যাঁ, আমি একটু-আধটু জানি।’