প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভের আয়োজনকে 'মৃত্যুকুম্ভ' বলে উল্লেখ করে তীব্র ভাষায় আয়োজকদের সমালোচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গল (১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে বক্তব্য পেশের সময় নাম না করে বিজেপি নেতৃত্বাধীন উত্তরপ্রদেশ সরকার থেকে শুরু করে বিজেপিরই নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের অধীনে থাকা রেল মন্ত্রককে নিশানা করেন তিনি।
মমতার এদিনের এই সংক্রান্ত বক্তব্যের ৩ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো ক্লিপ সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই পুরো অংশটিজুড়ে এবারের মহাকুম্ভের অব্যবস্থা নিয়ে সরব হতে শোনা গিয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে। এমনকী, মহাকুম্ভে পদপিষ্টের জেরে মৃত্যুর ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিরুদ্ধে দেহ লোপাটের মতো গুরুতর অভিযোগও তুলেছেন মমতা।
তিনি বলেন, 'মহাকুম্ভ আমি নাই বা বললাম, ওটা মৃত্যুকুম্ভ হয়ে গিয়েছে! মৃত্যুকূপের মতো! আমি মহাকুম্ভকে সম্মান করি। আমি শ্রদ্ধা জানাই। পবিত্র গঙ্গা মাকে আমি সম্মান করি। কিন্তু, প্ল্যানিং না করে এত হাইপ তুলে, এত লোকের মৃত্যু! বললেন ৩০ জন। কথাটা কি সঠিক? কত জনকে ভাসিয়ে দিয়েছেন নদীতে? কত? হাজার হাজার!'
প্রসঙ্গত, মহাকুম্ভের পদপিষ্টের ঘটনায় সরকারিভাবে অন্তত ৩০ জনের মৃত্যু কথা বলা হলেও তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের দাবি, মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
এদিকে, মহাকুম্ভ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের তরফে এ নিয়ে ব্যাপক প্রচার করা হয়েছে। যার জেরে অভিযোগ উঠছে, যোগী সরকার প্রচারে যতটা মন দিয়েছে, ব্যবস্থাপনায় ততটা দেয়নি। উপরন্তু, ভিআইপিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে গিয়ে সাধারণ পুণ্য়ার্থীদের নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করা হয়েছে।
মমতার এদিনের ভাষণেও কার্যত অভিযোগের সেই একই সুর শোনা গিয়েছে। তিনি বলেন, 'বড়লোক আর ভিআইপিদের জন্য লক্ষ টাকার ক্যাম্প। আর গরিব লোকেদের, সাধারণ লোকেদের জন্য লাইনে দাঁড়ান। ১৫ ঘণ্টা, ২০ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে যদি একটা মাদুরেও বসে, ২০০০ টাকা!'
মহাকুম্ভের আয়োজকদের উদ্দেশে মমতার কটাক্ষ ও বার্তা, 'এইসব সিরিয়াস প্রোগ্রামে এত হাইপ তুলতে নেই। ফার্স্ট দেখতে হয় ক্যাপাসিটি আছে কিনা। প্ল্যানিংটা ভালো করে করতে হয়।' মমতা কার্যত বুঝিয়ে দিয়েছেন যে মহাকুম্ভের আয়োজনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে উত্তরপ্রদেশ সরকার।
মহাকুম্ভে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আমাদের বাংলার বাসিন্দারাও ছিলেন। উত্তরপ্রদেশ সরকার যেভাবে 'ডেথ সার্টিফিকেট' ইস্যু না করেই তাঁদের দেহ ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে, তারও তীব্র সমালোচনা করেছেন মমতা। প্রশ্ন তুলেছেন, যদি নিহতদের বৈধ 'ডেথ সার্টিফিকেট'ই না থাকে, তাহলে তাঁদের পরিবার সরকারের ঘোষিত ক্ষতিপূরণের টাকা পাবে কীভাবে?
এর পাশাপাশি, দিল্লি রেল স্টেশনের পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা নিয়েও সরব হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। যদিও তাঁর বক্তব্য, তিনি এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করেন না। একইসঙ্গে কুম্ভের প্রসঙ্গ টেনে নাম না করে বিজেপিকে বার্তা দিয়েছেন, 'মৃতদেহের উপর দিয়ে যাঁরা এই হাইপ তুলছেন, আর টাকা কামানোর জন্য ধর্মকে বিক্রি করছেন, তাঁদের আমি মন থেকে মেনে নিতে পারি না।'
সবশেষে বলেছেন, 'আমিও গর্ব বোধ করি, আমি হিন্দু ধর্মের লোক। কিন্তু আমি সর্বধর্মের লোক। এটা নিয়ে আমি বেশি গর্ব বোধ করি।'