হকারদের থেকে টাকা তোলেন রাজনৈতিক নেতা এবং পুলিশ অফিসাররা। নবান্ন থেকে হকার এবং দখলদারি সংক্রান্ত বিষয়ে পর্যালোচনা সভায় ফের নেতা এবং পুলিশ অফিসারদের তুলোধোনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার তাঁদের একবার ধমক দিয়েছিলেন। তারপর রাজ্যজুড়ে উচ্ছেদ অভিযান চলেছে। তারপর বৃহস্পতিবার পর্যালোচনা বৈঠকে বসেন মমতা। সেখানে রাজনৈতিক নেতা এবং পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে উষ্মাপ্রকাশ করেন। সেইসঙ্গে তিনি জানান যে হকারদের এক মাস দেওয়া হচ্ছে। আপাতত উচ্ছেদ অভিযান চলবে না। তবে নতুন কাউকে বসতে দেওয়া হবে না।
হকার এবং দখলদারি সংক্রান্ত বিষয়ে পর্যালোচনা সভায় মমতা কী বলছেন?
১) মমতা: যে কাউন্সিলরদের এলাকায় বেআইনিভাবে জমি দখল করা হবে, তাঁদের গ্রেফতার করা হবে। যে যত বড়ই নেতা হোক না কেন, কাউকে রেয়াত হবে না। যাঁরা ভালো কাজ করবেন, তাঁদের পুরস্কার দেওয়া হবে।
২) মমতা: প্রথমে বসাবেন, তারপর বুলডোজার দিয়ে তুলে দেবেন, সেটা হবে না। হকারদের থেকে চাঁদা তোলা বন্ধ করুন।
৩) মমতা: এরকমভাবে রাস্তা দখলের জন্য নেতা এবং পুলিশই দায়ি। হকারের থেকে টাকা নিচ্ছেন নেতা এবং পুলিশ অফিসাররা। আপনি বলব যে লোভ সংবরণ করুন আপনারা। জীবনযাপন করার জন্য যতটুকু দরকার, সেটায় সন্তুষ্ট থাকুন।
৪) মমতা: বেআইনি পার্কিং জোন। এরা নেতা এবং পুলিশকে টাকা দিয়ে অনেক জায়গায় বেআইনিভাবে পার্কিং জোন তৈরি করেছে।
৫) মমতা: রাস্তায় আবর্জনা ফেলা যাবে না। এটা ক্রাইম। রাস্তায় আবর্জনা ফেললে জরিমানা করতে হবে। পুরো বিষয়টা কেন্দ্রীয়ভাবে করতে হবে। বিভিন্ন জায়গা থেকে টেন্ডার ডাকা হয়। টাকা খায়।
৬) মমতা: হকার জোনের জন্য জায়গা দেখুন। তিন মাস সময় দিলাম। দয়া করে আমায় প্ল্যানটা পাঠান।
৭) মমতা নির্দেশ দিয়েছেন যে একটি পোর্টাল তৈরি করা হবে। কোথায় হকাররা বসতে পারবেন, কোথায় হকাররা বসতে পারবেন না, সেটার তালিকা তৈরি করতে হবে।
৮) মমতা: এখন পুলিশের লোভ বেড়ে গিয়েছে। গরিব হকারদের থেকে চাঁদা নিচ্ছে।
৯) মমতা: বালি মাফিয়া, জমি মাফিয়ারা টাকা তুলে বিজেপিকে দেয়। আমার দলের পয়সার দরকার নেই। আমার দরকার হলে লোকের কাছে ভিক্ষা করে নেব। কিন্তু আমি কোনওদিন সরকারের পয়সা নেব না।
১০) বেআইনি পার্কিং জোন ভেঙে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুরো রাজ্যের কোথায় কী অবস্থা, তা নিয়ে রিপোর্ট চাইলেন। ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বললেন।
১১) কেষ্টপুর খালটা ভালো করেছ, আগেরদিনের ধমকের পরে সুজিত বসুর প্রশংসা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে রং নিয়ে সন্তুষ্ট হননি তিনি। কেন নীল-সাদা রং করা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সেইসঙ্গে তিনি জানান, উত্তরবঙ্গে গিয়ে দেখছেন যে শুধু লাল এবং গেরুয়া।
আরও পড়ুন: মমতার নিশানায় একটি জনগোষ্ঠী, রাজাবাজার, মেটিয়াবুরুজে কেন হচ্ছে না হকার উচ্ছেদ? প্রশ্ন শুভেন্দুর
১২) মমতা জানান যে হকারদের দোষ দিয়ে কোনও লাভ নেই। দোষটা আদতে তাঁদেরই। নিউ মার্কেট এলাকায় কেন বিল্ডিং বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে না কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা। হকারদের জন্য পৃথক বিল্ডিং বানিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
১৩) মমতা: এখনই উচ্ছেদের পথে না গিয়ে এক মাসের মধ্যে আমাদের সব কাজ সেরে ফেলতে হবে। হকাররা এক মাস সময় নিয়েছেন। তাঁদের সেই সময় দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ওই এক মাসের মধ্যে নতুন কোনও হকার বসার অনুমতি দেওয়া যাবে না।
১৪) মমতা: হকারদের জীবিকা কেড়ে নেওয়ার অধিকার নেই আমার। কিন্তু হকারদেরও নিয়ম মানতে হবে।
১৫) মমতার বৈঠকে হকারদের এক প্রতিনিধি অভিযোগ করেন যে শুধু যে হকাররা রাস্তা জবরদখল করে আছে, তাই নয়। বহু দোকানদাররাও সেটা করে আছেন। ফুটপাথের উপর গাড়ি পার্কিং করা হচ্ছে।
১৬) বড়বাজারের হকার সমস্যা মেটাতে হবে, কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে কড়া বার্তা দিলেন মমতা।
১৭) আমি হকারদের কেন ভালোবাসি, জানেন? রাস্তায় কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে অন্যরা চলে যান। কিন্তু হকাররা দৌড়ে এসে তাঁদের হাসপাতালে ভরতি করেন।
১৮) মমতা: আসানসোল তো রাস্তাই নেই। দুর্গাপুরেও তাই হচ্ছে। কারখানায় গিয়ে টাকা তুলছে। এটা বন্ধ করতে হবে। পুলিশ কেন উইক হবে? পুলিশকে মজবুত হতে হবে।
আরও পড়ুন: Hawker: রাজ্য জুড়ে ঘুরছে বুলডোজার, মুক্ত হচ্ছে ফুটপাত, পুলিশ-হকার ‘সেটিং’ উধাও