মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় 'নিষিদ্ধ' রিঙ্গার ল্যাকটেট স্যালাইনের ভূমিকা সরাসরি খারিজ করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ওই ঘটনায় প্রসূতিদের যে স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল, তাতে কোনও সমস্যা ছিল না!
এবিপি আনন্দের অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, মঙ্গলবার এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'বিরোধীরা স্যালাইন ইস্যু তুলেছেন। জানিয়ে দেবেন, মেদিনীপুর মেডিক্যালে যে ব্যাচের রিঙ্গার ল্যাকটেট ব্যবহৃত হয়েছিল, তা স্টেট ড্রাগ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করা হয়। তার গুণগত মানে গলদ নেই। সঠিক মানের স্যালাইনই হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। সঠিক মানের ওষুধের প্রোটোকল রয়েছে, তাতে খারাপ মানের ওষুধ সরবরাহ করা অসম্ভব। সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর হাসপাতালে স্যালাইন পাঠানোর আগে প্রতিটি ব্যাচ আলাদা করে পরীক্ষা করে দেখা হয়। এমনকী 'ন্যাশনাল অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড ফর টেস্টিং অ্যান্ড ক্যালিব্রেশন ল্যাবরেটরিজ'(এনএবিএল) থেকেও পরীক্ষা করানো হয়। হাসপাতাল সার্টিফিকেট দেখেই তবে সাপ্লাই রিসিভ করে।'
এখন প্রশ্ন হল, মুখ্যমন্ত্রী যা বললেন তার সঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবনের তদন্ত রিপোর্ট তো মিলছে না! কারণ, সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটির ৫ পৃষ্ঠার সেই রিপোর্টে বলা হয়েছিল - ওই প্রসূতিদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত 'রিঙ্গার ল্যাকটেট' বিশুদ্ধ না হওয়ার ফলেই বিপত্তি ঘটে থাকতে পারে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছিল, প্রসূতিদের অসুস্থতার কারণ হিসাবে 'আরএল ইনফিউশন' এবং 'অক্সিটোসিন ইনজেকশন'-এর ভূমিকাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তদন্ত কমিটির কাছে এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন মেদিনীপুর মেডিক্য়ালের চিকিৎসকরাও।
এমনকী, এই ঘটনার তদন্ত চলাকালীনই জানা যায়, এর আগেও এই স্যালাইন ব্যবহারের ফলে রোগীদের শরীরে জ্বর এবং কাঁপুনির মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে প্রসূতিদের শরীরিক সমস্যা বাড়ানোর জন্য 'অক্সিটোসিন'-এর অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহারের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে বলে দাবি সূত্রের।
যদিও পরবর্তীতে এই ঘটনায় মেদিনীপুর মেডিক্যালের চিকিৎসকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। ঘটনার জেরে ১৩ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করে স্বাস্থ্য দফতর।
প্রসঙ্গত, গত ৮ জানুয়ারি রাতে মেদিনীপুর মেডিক্য়াল কলেজ ও হাসপাতালে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন চন্দ্রকোণার বাসিন্দা মামণি রুইদাস। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, এরপর মামণিকে স্যালাইন দেওয়া হয় এবং তারপর থেকেই মামণির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। আর, ৯ জানুয়ারি রাতে মামণির মৃত্যু হয়। একইভাবে আরও চার প্রসূতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এই ঘটনার পরই সরকারি হাসপাতালে বিষাক্ত স্যালাইন ব্যবহারের অভিযোগে তোলপাড় শুরু হয় রাজ্য়ে। কিন্তু, মঙ্গলবার সেই স্য়ালাইনকেই কার্যত ক্লিনচিট দিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।