কেন তিনি সংসদে কাগজ ছিঁড়েছিলেন, কেনই বা বাম জমানায় বিধানসভার লবিতে আসবাব ভাঙচুর করা হয়েছিল, তিনি কি নিজে হাতে ভাঙচুর করেছিলেন? বহু বছরের পুরোনো সেইসব ঘটনা নিয়েই মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) রাজ্য বিধানসভায় জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।
মমতার বার্তা, লোকসভায় তিনি কাগজ ছিঁড়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু আসলে তিনি ওই আচরণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। বিধানসভায় ভাঙচুরের ঘটনা স্বীকার করলেও তিনি যে নিজে হাজে কোনও আসবাব ভাঙেননি, তাও স্পষ্ট করলেন মমতা।
কিন্তু, হঠাৎ করে 'পুরানো সেই দিনের কথা' কেন উত্থাপন করলেন মমতা? তার কারণ, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সোমবারের আচরণ এবং তাঁর তোলা কিছু প্রশ্ন ও প্রসঙ্গ।
উল্লেখ্য, সোমবার বিধানসভার বাজেট অধিবেশন চলাকালীন কাগজ ছিঁড়ে, সেই ছেঁড়া কাগজের টুকরো অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে লক্ষ করে ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। যার জেরে শুভেন্দু অধিকারী-সহ চার বিজেপি বিধায়ককে একমাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়।
এর প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে শুভেন্দু অধিকারীকে বলতে শোনা যায়, 'আমরা কাগজ ছিঁড়ে ফেলেছি, বিজনেস মানি না। ২০০১ থেকে ২০১১, তৃণমূল যখন বিরোধী ছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এসে বিধানসভা ভেঙে দিয়ে গিয়েছিলেন। লোকসভায় সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে চাদর, কাগজ ছুড়ে কে মেরেছিল? দেখেননি আপনারা?'
এদিকে, মঙ্গলবার বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের জবাবি ভাষণ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বক্তৃতাতেই শুভেন্দুর বাক্যবাণেরও জবাব দেন মমতা। তিনি বলেন, 'আপনারা (বিরোধী বিধায়করা) অনেকে আছেন সংখ্যায়। আমি যখন কাগজ ছিঁড়েছিলাম, আমি একা ছিলাম। বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম - একসঙ্গে আমার বিরুদ্ধে, আমাকে - সাতদিন ধরে একটাও কথা বলতে দিত না। একটা প্রশ্নের উত্তর দিত না। ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েও ২০০৪ সালে আমি যখন একা হয়ে গিয়েছিলাম, আমাকে ভাষণ দিতে দেওয়া হত না।'
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালে কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের জমানায় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে সংসদ। সেই সময়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে কাঁদতে দেখা গিয়েছিল, তৎকালীন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের আসন লক্ষ করে কাগজ ছুড়তে দেখা গিয়েছিল। ঘটনাচক্রে সেই সময় শুভেন্দু অধিকারী ছিলেন তাঁর দলীয় সহযোদ্ধা!
অন্যদিকে, এর বছর খানেক পর (২০০৬ সালে) বিধানসভার লবিতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সেই সময় তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে সিঙ্গুরে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সেই বাধার মুখে পড়ে কলকাতায় ফিরেই সোজা বিধানসভায় ঢুকে পড়েন মমতা ও তাঁর দলীয় সহকর্মীরা। তৃণমূল নেতাদের বিধানসভার লবিতে ভাঙচুর চালাতে দেখা যায়।
এদিন মমতা দাবি করেন, ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বরের সেই ঘটনায় তিনি মোটেও নিজে হাতে কোনও আসবাব ভাঙচুর করেননি। মমতা বলেন, 'আমাকে সিঙ্গুরে ঢুকতে দেয়নি। আমি সেখান থেকে ফিরে এসেছিলাম বিধানসভায়। সেই সময় বিরোধী দলনেতা ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসছিলাম। আমি বিধানসভার কোনও আসবাব ভাঙচুর করিনি। সেই সময়ে আমার দল উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল।'