দলের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ তৈরি হলেও কেউ প্রকাশ্যে কারোর বিরুদ্ধে বিষোদগার করেননি। একসময় শুভেন্দু অধিকারী তাঁর ‘বিশ্বস্ত’ সৈনিকও ছিলেন। এবার তাঁর ‘মানভঞ্জন’-এ আসরে নামেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফোনে সরাসরি কথা বললেন শুভেন্দুর সঙ্গে। তাহলে তাতেই কি শুভেন্দুর ‘অভিমান’ গলে জল হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলল? তা নিয়েই রাজনৈতিক মহলে জল্পনা চলছে।
প্রকাশ্যে কোনওদিন না বললেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে সম্পর্ক খুব একটা ‘মধুর’ ছিল না শুভেন্দুর। বিশেষত বিভিন্ন মহল থেকে কানাঘুষো শোনা যেত, বরাবরই মমতাকে সামনে রেখে দল করেছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। সেই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবারের বৈঠকে ছিলেন তিন ‘যুযুধান প্রতিপক্ষ’। এছাড়াও ছিলেন উত্তর কলকাতার সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সৌগত রায়। দমদমের সাংসদের এক বন্ধুর উত্তর কলকাতার বাড়িতে সেই বৈঠক হয়। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈঠক চলাকালীন ফোনে শুভেন্দুর সঙ্গে কথা বলেন মমতা। নন্দীগ্রামের বিধায়ককে ‘মিলেমিশে’ দলে কাজ করার আহ্বান জানিান তৃণমূল সুপ্রিমো। তাঁদের মধ্যে দীর্ঘদিন কথাও হয়নি বলে সূত্রের খবর।
কিন্তু কোন জাদুবলে মঙ্গলবারের বৈঠকে ‘জট’ কাটল বা কোন শর্তে রাজি হল দু'পক্ষ? সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি সৌগত। পরে তিনি জানান, দু'একদিনের মধ্যে মুখ খুলতে পারেন শুভেন্দু। একইসঙ্গে তিনি জানান, বৈঠকে কোনও শর্ত দেননি শুভেন্দু। যদিও সূত্রের খবর, শুভেন্দুর ‘ক্ষোভ’-এ কিছুটা ‘নমনীয়’ তো হতেই হয়েছে ঘাসফুল শিবিরকে। সেই 'শর্ত' অনুযায়ীস আগে শুভেন্দু যে পাঁচ জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন, সেখানে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শুভেন্দুর মতকে সবথেকে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ সেই পাঁচ জেলায় হাতের তালুর মতো তৃণমূলের সংগঠন চেনা শুভেন্দুর। তাতে ‘সায়’ দেওয়ার পাশাপাশি মমতার সঙ্গে ফোনে কথা হওয়ার বিষয়টিও ‘বরফ’ গলাতে অনেকটা সাহায্য করেছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
তবে মমতা এবং শুভেন্দুর ফোনালাপের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি সৌগত। ‘হিন্দুস্তান টাইমস’-কে সৌগত বলেন, ‘আলোচনা খুব ভালো হয়েছে। শুভেন্দু বলেছে যে ও দলে আছে। আলোচনায় বসার জন্য আমি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দুকে ডেকেছিলাম। (আগামিকাল) শুভেন্দু জনসমক্ষে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করবেন। আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি, শুভেন্দু দল ছাড়বে না। বৈঠকে যা হয়েছে, সে বিষয়ে আমি মুখ্যমন্ত্রীকে (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) জানিয়েছি।’ একইসঙ্গে তিনি জানান, বৈঠক নিয়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মমতা।
বৈঠকের বিষয়ে শুভেন্দুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তৃণমূল নেতাকে পাওয়া যায়নি। তবে শুভেন্দুর বাবা তথা পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘এটা ভালো খবর। এতদিন যা হচ্ছিল, তা দলের জন্য ভালো নয়।’