দুয়ারে বিধানসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনে বাংলায় নতুন সরকার গড়তে চায় বিজেপি। সেটাই তাদের লক্ষ্য। আর তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই গ্রাম থেকে শহর ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে নিজের কষ্টের কথা, লড়াইয়ের কথা নতুন প্রজন্ম তথা বাংলার মানুষের সামনে তুলে ধরলেন। যা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনলেন জনগণ। সভা হচ্ছিল দলের তপসিলি জাতি–উপজাতি সেলের। সেখানেই আবেগের সুরেই দিদি তুলে ধরেন নিজের জীবনের লড়াইয়ের কথা।
বাংলার মানুষকে জানাতে এবং বার্তা দিতে তিনি বলেন, ‘বন্ধু অনেক কষ্ট করে মানুষ হয়েছি জীবনে। অনেক লড়াই করতে হয়েছে। কিন্তু একটা লোকের কাছেও ভিক্ষা করিনি। হতাশ হয়ে পড়িনি। আসলে আমার বাবা–মা কোনওদিন শেখায়নি চুরি করে রোজগার করতে। বই কিনতে পারিনি, খাতায় লিখে পড়াশুনা করেছি।’
পার্টিকরর্মীদের বার্তা দিতে নিজের জীবনের উদাহরণ তুলে ধরেন জননেত্রী। তৃণমূল সুপ্রিমো আবেগপ্রবণ হয়ে জানান, খুব কষ্টসাধ্য ছিল ছোটবেলার জীবন। ছোট্টবেলায় বাবা মারা গিয়েছেন। তখন আমরা ৬ ভাই ২ বোন। বড় সংসার। ছোট্ট ভাইটার বয়স তখন ২ বছর। আমার উপর দাদা, আর তারপর আমি। সংসার চালিয়েছি আমি খুব কষ্ট করে। ভোরবেলায় উঠতাম ঘুম থেকে। বাড়ির কাজ করতাম। মায়ের কষ্ট হবে। তাই তাঁকে রান্না করতে না দিয়ে নিজে রান্না করতাম। তারপর কলেজে যাওয়া। সেখান থেকে বেরিয়ে লাইব্রেরি যাওয়া। খাতায় সব লিখে আনতে রাত হয়ে যেত। তাই করেছি দিনের পর দিন। কি করব! বই কেনার টাকা ছিল না। কেউ দেয়ওনি। তাই সেই কষ্টের অতীত মনে রেখে আজ স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের বই তুলে দিই।
এখানেই শেষ নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘দাদাকে দাঁড় করিয়েছি আমি। সংসার টেনেছি আমি। কারণ তা না হলে সংসার চলত না।’ এখন রাজ্য–রাজনীতি তোলপাড় মমতার কালীঘাটের বাড়িতে পদ্ম ফুটবে কী না, তা নিয়ে! জল্পনা রয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিতে শামিল হতে পারেন। যদিও সবটাই আলোচনা স্তরে রয়েছে বলে জানিয়েছেন কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়। অতীতের এই কথাগুলি তিনি স্মরণ করিয়ে কার্তিককে বার্তা দিলেন বলেই অনেকে মনে করছেন। এমনকী দলের কর্মীদেরও বার্তা দিলেন তিনি বলে মনে করা হচ্ছে।
মমতা আরও বলেন, ‘রাত তিনটের সময় ঘুম থেকে উঠতাম। রান্না করতাম। ভাই–বোনেরা কী খাবে! মাকে কাজ করতে দিতাম না। তারপর ৬:১৫ মিনিটে ক্লাস কলেজে যেতাম।’ অর্থাৎ তিনি ছোট থেকে লড়াই করেই আজ এই জায়গায় পৌঁছেছেন তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। এই কথাগুলি তিনি এমন সময়ে বললেন যখন শুভেন্দু অধিকারী বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের অন্দরে পদ্ম ফোটানোর বার্তা দিয়েছেন। তাই মমতার এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ বিজেপি এই সরকারকে ফেলে দিতে চায়। যেখানে বাংলার মানুষের জন্য তাঁর সরকার দুয়ারে পৌঁছে গিয়েছে। তাই তিনি বলছেন, ‘আমার কন্ঠ স্তব্ধ করা যাবে না। আমি লড়াই করে উপরে উঠেছি। এত সোজা না আমাকে আটকানো।’