'মূল কাণ্ডারী'-কে স্বীকৃতি না দিয়ে ফায়দা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে দুর্গাপুজো যাতে ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমা পায়, সেজন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করা তপতী গুহ ঠাকুরতাকে যোগ্য সম্মান জানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেড রোডের অনুষ্ঠানে মূল মঞ্চেই তপতী গুহ ঠাকুরতাকে বসানো হয়। তাঁকে ধন্যবাদও জানান মমতা।
দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ তকমা দেওয়ায় আজ ইউনেস্কোর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কলকাতা। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে রেড রোড পর্যন্ত শোভাযাত্রা হয়। মিছিলের শেষে রেড রোডে সংবর্ধনা জানানো হয় ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের। মূলমঞ্চে ছিলেন হাতেগোনা কয়েকজন অতিথি। মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, ফিরহাদ হাকিম, বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ মূল মঞ্চে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়রা ছিলেন। সেখানে ছিলেন কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশাল সায়েন্সেসের অধিকর্তা তপতী গুহ ঠাকুরতাও।
নিজের ভাষণের শুরুতেই প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী তপতী গুহ ঠাকুরতাকে ধন্যবাদ জানান মমতা। তিনি বলেন, ‘আমি তপতীদেবীকে ধন্যবাদ জানাই। যিনি সোশ্যাল স্টাডিজে কাজ করেন এবং অনেক গবেষণা করে সাহায্য করেছেন, তাঁদের আমি ধন্যবাদ জানাই।’ পালটা হাসিমুখে ধন্যবাদ জানাতেও দেখা যায় কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশাল সায়েন্সেসের অধিকর্তা তপতী গুহ ঠাকুরতাকে।
যদিও দিনকয়েক ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ উঠছিল, রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে তপতী গুহ ঠাকুরতাকে যোগ্য সম্মান দেননি মুখ্যমন্ত্রী। তপতী গুহ ঠাকুরতার একার কৃতিত্বেই ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমা পেয়েছে কলকাতার দুর্গাপুজো। যদিও পরবর্তীতে তপতী গুহ ঠাকুরতাকে উদ্ধৃত করে কমলিকা মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁকে যোগ্য স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তাতেও অবশ্য বিতর্ক থামেনি।
তারইমধ্যে রেড রোডে তপতী গুহ ঠাকুরতাকে মুখ্যমন্ত্রী ধন্যবাদ জানানোয় পালটা খোঁচা দিতে শুরু করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা। দেবাংশু ভট্টাচার্য ফেসবুকে বলেন, ‘তপতী গুহ ঠাকুরতাকে নিজের হাতে সংবর্ধিত করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উনি সম্মান জানাতে জানেন। ক্রেডিট দিতে জানেন। তাহলে Makusss? এটাও গেল? ইস্.. এভাবেই যতবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ল্যাং মারার চেষ্টা করবেন, ঈশ্বর ততবার পাল্টা পদাঘাত ফিরিয়ে দেবে প্রতিটা কোণা থেকে।’
তপতী গুহ ঠাকুরতা আসলে কে?
এক দশকের বেশি সময় ধরে দুর্গাপুজো নিয়ে কাজ করছেন কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশাল সায়েন্সেস অধিকর্তা তপতী গুহ ঠাকুরতা। ২০১৫ সালে দুর্গাপুজো নিয়ে তাঁর একটি বই (In the Name of the Goddess: The Durga Pujas of Contemporary Kolkata) প্রকাশিত হয়েছিল। গত বছর প্রকাশিত দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুর্গাপুজো যাতে ইউনেস্কোর হেরিটেজ স্বীকৃতি পায়, সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশাল সায়েন্সেসের অধিকর্তা।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2022: 'দিদির থেকে নয়া স্বীকৃতি চাই না', তপতীর একার কৃতিত্বে UNESCO হেরিটেজ দুর্গাপুজো?
দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশাল সায়েন্সেসের অধিকর্তা জানিয়েছেন যে তিনি ফিল্ড এক্সপার্ট ছিলেন। যাতে দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ তকমা দেওয়া হয়, সেজন্য কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফে খসড়া ডসিয়ার তৈরি করেছিলেন। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে কাজ শুরু করেছিলেন। ২০১৯ সালের মার্চে সেই ডসিয়ার জমা দিয়েছিলেন। তাতে দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পক্ষের মন্তব্য তুলে ধরেছিলেন।