হাসপাতালের বাইরে এসে বলেছিলেন, ‘ওঁর মরদেহ আমার পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। জীবনে অনেক দুর্যোগ এসেছে। কিন্তু এত বড় দুর্যোগ আগে আসেনি।’ হ্যাঁ, এই প্রতিক্রিয়া বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আর সংবাদমাধ্যমের সামনে আজ ভেঙে পড়ে জানালেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মনটা বড় অস্থির লাগছিল। বুঝতে পারিনি। মনে হচ্ছিল, কোথাও একটা কিছু গোলমাল হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এলো সুব্রতদার মৃত্যুসংবাদ।
কী বললেন মুথ্যমন্ত্রী? তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বাড়িতে তখন কালীপুজো চলছে। আর আমি সুব্রতদার অবস্থা খারাপ বলে খবর পাচ্ছি। তাই পুজোতেও মন বসাতে পারছিলাম না। তারপর যখন ক্ষতির খবর এল, তখন হোম চলছে। এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে হাসপাতালে ছুটলাম। তবে সুব্রতদাকে ওইভাবে দেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ছন্দবাণী বৌদিকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠালাম। জানি, এই শোকের কোনও সান্ত্বনা নেই। তবু কিছু করারও তো নেই।
গোয়াতে গিয়ে সুব্রতদার অসুস্থতার খবর পেলাম। ফিরেই ছুটলাম হাসপাতালে দেখতে। সুব্রতদা তখন বলেছিলেন, ‘আমি একদম ঠিক আছি। প্রোগ্রাম দে। আমিও গোয়ায় যাব। আর যেখানে যেখানে যেতে হবে বলিস। শুয়ে থাকতে ভাল লাগছে না।’ এমন একজন অফুরান জীবনীশক্তির মানুষ আজ নেই। এটা ভাবতে পারছি না। কথা বলতে ভাল লাগছে না।
সুব্রত মুখোপাধ্যায় আমার কাছে একজন বড় ‘দাদা’। রাজনীতির সঙ্গেই স্নেহ করতেন ভীষণ। যখন যোগমায়া দেবী কলেজে ছাত্র রাজনীতি করি তখন সুব্রতদা রাজ্যে অবিসংবাদী ছাত্র নেতা। ছাত্র পরিষদের সভাপতি। একদিন ডেকে পাঠিয়ে বললেন, ‘তোরা খুব ভাল কাজ করছিস। চলে আয়। একসঙ্গে কাজ করব।’। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
আর ১৯৮৪ সালে আমি যখন প্রথম লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হলাম, তখন প্রণবদার কাছে আমার নাম প্রস্তাব করেছিলেন সুব্রতদাই। প্রণবদা তখন সুব্রতদাকে বলেছিলেন, যাদবপুরে একজন লড়াকু মেয়েকে প্রার্থী করতে চাইছেন রাজীব গান্ধী। আমি জানতাম না, আমার নাম প্রস্তাব করেছেন সুব্রতদা। প্রণবদা তখন জানতে চেয়েছিলেন, ও কি পারবে? সুব্রতদা বলেছিলেন, পারলে, ওই পারবে।
এভাবেই রাজনীতির জগতে এবং ব্যক্তিগতস্তরে কাজ করে গিয়েছেন সুব্রত দা। তাই আমাদের মধ্যে সম্পর্ক অনেক দৃঢ় হয়েছিল। কখনও মনে হয়নি, আমি মুখ্যমন্ত্রী আর সুব্রতদা মন্ত্রী। উনি সবসময় আমাকে গাইড করেছেন। তাই ভেবেছি, উনি দাদা। আমি বোন। ভুল হলে শিখিয়েছেন। সেই সমপর্কটা আজ শেষ হয়ে গেল। আমি সুব্রতদাকে প্রণাম জানাই। ওরকম মানুষ পাওয়া বিরল।