চরমে উঠল নবান্ন-রাজভবন দ্বৈরথ। ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে শীতলকুচিতে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সফর নিয়ে কড়া চিঠি পাঠালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাফ জানালেন রাজ্যপাল দীর্ঘদিনেক প্রথা লঙ্ঘন করেছেন। সেইসঙ্গে তাঁকে নির্দিষ্ট প্রোটোকল মেনে চলার পরামর্শ দিলেন মমতা।
বুধবার ধনখড়কে চিঠি লিখে পশ্চিমবঙ্গে সরকারের প্রোটোকল এবং আচার-সংক্রান্ত ম্যানুয়াল স্মরণ করিয়ে দেন মমতা। চিঠির বয়ান অনুযায়ী, ম্যানুয়ালে লেখা আছে যে, ‘সরকারের নির্দেশ পাওয়ার পর রাজ্যপালের জেলা সফরের কর্মসূচি চূড়ান্ত করেন রাজ্যপালের সচিব। বেসরকারি কোনও পক্ষ হোক বা কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠান - রাজ্যপালকে কোনও আর্জি জানানোর আগে রাজ্য সরকার, সংশ্লিষ্ট জেলা যে ডিভিশনের অন্তর্গত, সেখানকার কমিশনার এবং জেলা আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা করেন রাজ্যপালের সচিব। যে জেলা আধিকারিক সার্বিকভাবে কর্মসূচি সঠিকভাবে রূপায়ণের দায়িত্বে আছেন।’
যদিও মমতার দাবি, কোচবিহারের সফর নিয়ে সেই ম্যানুয়েল মেনে চলেননি ধনখড়। মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে লিখেছেন, সোশ্যাল মিডিয়া থেকে জানতে পেরেছেন যে ‘একতরফাভাবে’ আগামিকাল কোচবিহারে যাচ্ছেন ধনখড়। যা প্রোটোকলের বিরুদ্ধে বলে দাবি করেছেন মমতা। চিঠিতে লিখেছেন, ‘দুঃখজনকভাবে তাতে (ধনখড়ের সফর) দীর্ঘদিনের প্রথা লঙ্ঘিত হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে। যা কয়েক দশক ধরে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাই আমি আশা করছি যে নির্দিষ্ট প্রোটোকল মেনে চলবেন আপনি এবং বিভিন্ন জায়গায় সফরের হঠকারী সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকবেন।’
ভোট-পরবর্তী হিংসার ঘটনা নিয়ে মমতার শপথগ্রহণের আগে থেকেই সংঘাতে জড়িয়েছে নবান্ন ও রাজ্যপাল। ঠিক আটদিন আগে মমতার শপথগ্রহণের দিনও সেই দ্বৈরথ ধরা পড়ে। তারইমধ্যে একাধিকবার রাজ্যের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে থাকেন ধনখড়। পালটা মমতাও দাবি করেন, ৫ মে তাঁর হাতে প্রশাসনিক দায়িত্বে এসেছে। সেই তরজার মধ্যেই রাজ্যপাল জানান, যেখানে যেখানে ভোট-পরবর্তী হিংসর অভিযোগ উঠেছে, সেখানে সেখানকার পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে যাবেন তিনি। তবে শুধু আবার বাংলায় নয়, অসমেও যাবেন। তারইমধ্যে বুধবার পত্রাঘাত করেন মমতা।
চিঠিতে একইসঙ্গে মমতা জানান, গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ধনখড়কে চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রীদের এড়িয়ে রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। যা সংবিধানে প্রদত্ত রাজ্যপালের ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু তাও বারবার সেই কাজ করছেন ধনখড়। তাই তাঁকে আবারও রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া বা তাঁদের থেকে সরাসরি রিপোর্ট চাওয়া থেকে বিরত থাকার আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।