নবান্নের বৈঠক থেকে তেমন কোনও ইতিবাচক ইঙ্গিত পাননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর প্রশাসনের শারীরিক ভাষাও একেবারেই ইতিবাচক ছিল না। কিন্তু আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং মেডিক্যাল কলেজের তরুণী চিকিৎসকের বাবা ও মায়ের কথায় আমরণ অনশন তুলে নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সেইসঙ্গে মঙ্গলবার যে সর্বাত্মক স্বাস্থ্য ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছিল, সেটাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তবে নিজেদের দাবিতে অনড় থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে দাবি করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। আগামী শনিবার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে গণ কনভেনশনের ডাক দিয়েছেন।
মমতার সঙ্গে বৈঠকের পরে অনশন প্রত্যাহার
তাঁরা সেই ঘোষণা করেছেন সোমবার রাত প্রায় ১০ টা নাগাদ। সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে বৈঠক করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ৪৫ মিনিট বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক চলে দু'ঘণ্টার বেশি। আর সেই বৈঠকের পরে ধর্মতলায় নিজেদের অনশন মঞ্চে এসে বৈঠক করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তারপর তাঁরা আমরণ অনশন প্রত্যাহারের ঘোষণা করেন।
জুনিয়র ডাক্তারদের মঞ্চের তরফে কী কী বলা হল?
— অভীক দে, বীরূপাক্ষ বিশ্বাসদের জন্যই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা ঘটেছে।
— থ্রেট কালচার নিয়ে বৈঠক বলতে গেলে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী রীতিমতো ধমকি দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছেন।
— আজকের বৈঠকে আমরা যদি কোনও কিছু ছিনিয়ে আনতে পারি, সেটা হল রাজ্য টাস্ক ফোর্স। কেন্দ্রীয়ভাবে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে।
— আমাদের রীতিমতো থ্রেট দেওয়া হয়। লাইভস্ট্রিমিংয়ে আপনারা দেখেছেন। পরীক্ষার খাতা খতিয়ে দেখার বলে থ্রেট দেওয়া হয়।
— মার্চে মেডিক্যাল কলেজে ভোট হবে বলে জানানো হয়েছে। এটা একটা বড় জয়।
— প্রশাসনের শরীরীভাষা একেবারেই ইতিবাচক লাগেনি। আমাদের 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' ব্যাচ পরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমাদের প্রিন্সিপালদের কার্যত চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। কেন রাজ্যকে না জানিয়ে থ্রেট কালচারের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করা হয়।
— আমাদের মঞ্চে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং মেডিক্যাল কলেজের তরুণী চিকিৎসকের বাবা ও মা এসেছেন। কাকু-কাকিমা এসেছেন। তাঁরা আমাদের আমরণ অনশন তুলে নিতে বলেছেন। সাধারণ মানুষও বলেছেন যেন অনশন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
কবে থেকে অনশন করছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা?
প্রাথমিকভাবে ছ'জন জুনিয়র ডাক্তার আমরণ শুরু করেছিলেন। তারপর আরও কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তার অনশন শুরু করেন। তারইমধ্যে কয়েকজন অসুস্থও হয়ে পড়েন।
১) অর্ণব মুখোপাধ্যায়: ৫ অক্টোবর থেকে অনশন শুরু।
২) স্নিগ্ধা হাজরা: ৫ অক্টোবর থেকে অনশন শুরু।
৩) সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা: ৫ অক্টোবর থেকে অনশন শুরু।
৪) আলোলিকা ঘোড়ুই: ১১ অক্টোবর থেকে অনশন শুরু।
৫) পরিচয় পণ্ডা: ১১ অক্টোবর থেকে অনশন শুরু।
৬) সন্দীপ ঘোষ: ১৪ অক্টোবর থেকে অনশন শুরু।
৭) রুমেলিকা কুমার: ১৫ অক্টোবর থেকে অনশন শুরু।
৮) স্পন্দন চৌধুরী: ১৫ অক্টোবর থেকে অনশন শুরু।
৯) অনিকেত মাহাতো: হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন (৬ অক্টোবর থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত অনশন)।
১০) অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়: হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন (৫ অক্টোবর থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত অনশন)।
১১) পুলস্ত্য আচার্য: হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন (৫ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত অনশন)।
১২) তনয়া পাঁজা: হাসপাতালে ভরতি আছেন (৫ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত অনশন)।
১৩) শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়: হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন (৬ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত অনশন)।
১৪) অলোক বর্মা: হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন (৬ অক্টোবর থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত অনশন)।