আইন আদালত এড়িয়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়া বা দুর্নীতির টাকা ফেরত দেওয়ার ঘটনা তৃণমূল সরকারের জমানায় নতুন নয়। তা সে সারদার ক্ষতিপূরণ হোক বা আমফান দুর্নীতির টাকা ফেরত নেওয়া, কোনও ব্যাপারেই আদালতের পরোয়া করেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সেই ধাঁচে সন্দেশখালিতে তৃণমূলের গুন্ডা শেখ শাহজাহানের বাহিনীর দখল করা জমি ফেরত দিতে গিয়ে এবার আদালতে বিপাকে পড়ল রাজ্য সরকার। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ স্পষ্ট বলল, জমি ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া যখন রাজ্য সরকার শুরু করেছে তার মানে গোলমাল কোথাও একটা হয়েছে এটা প্রমাণিত। এর পর আর প্রমাণের দরকার কী? সরাসরি সাজা দিতে হবে শেখ শাহজাহানকে।
আরও পড়ুন: আধার বাতিল হয়ে গেলে ভোট দিতে পারবেন না এই প্রচার ভুয়ো, বলছে তৃণমূলই
সন্দেশখালির প্রতিবাদীদের বহিরাগত বলে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের বিপদ বাড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলনেত্রীর ওই মন্তব্যের পর আরও তীব্রতা পায় বিক্ষোভ। এর পর তৃণমূলের তরফে মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক সন্দেশখালি গিয়ে আশ্বস্ত করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শাহজাহান শেখ ও তার বাহিনীর দখল করা সব জমি ফেরত দেওয়া হবে। সেজন্য পুলিশ ক্যাম্প খুলে অভিযোগপত্র সংগ্রহ করবে। গত কয়েকদিনে সন্দেশখালির বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের ক্যাম্পে বেশ কয়েকশ অভিযোগ জমা পড়েছে। সোমবার থেকে জমি ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। রবিবার পর্যন্ত ৬৫ জন অভিযোগকারীর জমি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে দাবি করেছেন দফতরের এক আধিকারিক। আর সেই খবর যেদিন প্রকাশ্যে এল সেদিনই আদালতে বুমেরাং হল জমি ফেরতের সিদ্ধান্ত।
এদিন শাহজাহানের গ্রেফতারির ওপর স্থগিতাদেশ জারি হয়েছে বলে তৃণমূল নেতারা যে দাবি করে বেড়াচ্ছিলেন তার ওপর শুনানিতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্যের আইনজীবী জানান, সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের দখল করা জমি ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একথা শুনেই প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘জমি ফেরত দিতে হচ্ছে মানে কিছু গোলমাল হয়েছে। আর কী প্রমাণের দরকার। সরাসরি সাজা দিতে হবে অভিযুক্তকে।’ এদিন আদালত স্পষ্ট করে দেয়, শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারির ওপর কোনও স্থগিতাদেশ নেই। বরং তাঁকে ইডির মামলায় পক্ষ করার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি।
আরও পড়ুন: CRPF জওয়ানকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ TMC বিধায়কের বিরুদ্ধে
এর আগে সারদার প্রতারিতদের ক্ষতিপূরণ দিতে কমিশন গঠন করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তার জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে রাজ্য সরকার। কিন্তু বেসরকারি সংস্থার দ্বারা প্রতারণার ক্ষতিপূরণ করদাতার টাকায় কেন দেওয়া হবে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
২০২০ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ঘূর্ণিঝড় আমফানে ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন ব্যক্তিদের পরিবারপিছু ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করে রাজ্যকে পাঠায়। পরে দেখা যায় সেই টাকা ঢুকেছে তৃণমূলের ছোট – বড় - মাঝারি নেতার পরিবার ও আত্মীয়দের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। কিন্তু তাদের বাড়ি বহাল তবিয়তেই রয়েছে। উলটে যাদের বাড়ি পুরোপুরি ভেঙে গিয়েছে তাদের অধিকাংশই ক্ষতিপূরণ পাননি। এই দুর্নীতির জেরে বিক্ষোভ ছড়ায় জেলায় জেলায়। বাধ্য হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার অবৈধভাবে যাদের অ্যাকাউন্টে টাকা গিয়েছে তাদের টাকা ফেরাতে বলে। সেজন্য একটি ফর্ম জারি করে রাজ্য প্রশাসন। তাতে ভুল স্বীকার করে টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু সরকারি টাকা নয়ছয়ে জড়িত এক জনেরও বিরুদ্ধে পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি প্রশাসন।