'কলকাতা ভারতের সবথেকে নোংরা শহর'- সোশ্যাল মিডিয়ায় এক নেটিজেনের এমনই এক পোস্ট নিয়ে তুলকালাম বেঁধে গেল। ওই যুবক কয়েকটি ছবি দেখিয়ে দাবি করেছেন যে কলকাতার মতো একটাও অপরিচ্ছন্ন শহর হয় না ভারতে। কলকাতার কোণায়-কোণায় অস্বাস্থ্যকর ছবি দেখতে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন ওই যুবক। কেউ-কেউ তাঁকে সমর্থনও জানিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ-কেউ দাবি করেছেন যে তাঁরা কলকাতায় থাকেন। কেউ-কেউ আবার দাবি করেছেন যে এই অবস্থার জন্য কলকাতা ছেড়ে চলে গিয়েছেন। গুটিকয়েক নেটিজেন আবার দাবি করেছেন যে তাঁরাও যখন কলকাতায় এসেছিলেন, তখন এরকম অবস্থা দেখেছিলেন। যদিও পালটা প্রশ্নের মুখে পড়েছেন ওই যুবক। অনেকেই দাবি করেছেন যে ইচ্ছাকৃতভাবে তুলনায় শহরের অপরিচ্ছন্ন অংশে গিয়ে পুরো কলকাতাকেই নোংরা বলে তুলে ধরেছেন। আর রাজনৈতিক কারণেই ওই যুবক সেই কাজটা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এক্স অ্যাকাউন্টে নিজেকে ‘স্বয়ংসেবক’ হিসেবেও দাবি করেছেন ওই যুবক। কেউ-কেউ আবার পালটা বিজেপি-শাসিত রাজ্যের ছবি পোস্ট করে দাবি করেছেন যে ওখানে কী অবস্থা হয়ে আছে?
‘অনাহারে থাকা কোনও আফ্রিকার শহর নয়, এটা কলকাতা’
আর সেই যাবতীয় বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে গত মঙ্গলবার। সেদিন এক্সে একাধিক ছবি ও ভিডিয়ো পোস্ট করেন ওই যুবক। একটি পোস্টে লেখেন, 'এটা অনাহারে থাকা কোনও আফ্রিকার শহর নয়, এটা কলকাতা। শিয়ালদা নামে এক ব্যস্ত মেট্রো স্টেশনের (দৃশ্য এটা)। আর একটা বাজার বড়বাজারের (দৃশ্য এটা)। খোলা নর্দমা, সর্বত্র প্রস্রাবের গন্ধ। ঠিকমতো শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছি না। অথচ স্থানীয় বাসিন্দারা একটি নর্দমার উপরে থাকা দোকান থেকে উপভোগ করে প্রাতঃরাশ সারছেন।
আরও পড়ুন: ফের কলকাতায় দোতলা আন্ডারপাস, উপরে গাড়ি, নীচে মানুষ, সবটাই মাটির তলায়
বাজারের কয়েকটি ছবি এবং ভিডিয়ো দেখিয়ে ওই যুবক বলেন, 'বিক্রেতারা নর্দমার উপরে বসে কলকাতায় জিনিসপত্র বিক্রি করছেন। আমি ভারতের কোথাও এরকম দেখিনি। যতই গরিব লোক থাকুক বা পরিকাঠামো খারাপ হোক, এরকম কোথাও দেখিনি। আর আমি প্রচুর ঘুরেছি।' সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনি যেটা খাবেন, সেটা নর্দমার উপরে, নোংরা মেঝেতে রাখা হয়েছে। লোকজন শুধু ঝামেলা করছেন, গালিগালাজ করছেন এবং যেখানে-সেখানে থুতু ফেলছেন।’
শুধু তাই নয়, ওই ব্যক্তি দাবি করেছেন, অধিকাংশ বাড়ি দেখে মনে হয় যে জোরালো ভূমিকম্পে ভেঙে পড়বে। সারাক্ষণ এত গাড়ির হর্ন দেওয়া হচ্ছে যে মাথা ধরে যাচ্ছে। উবের বা র্যাপিডো বুক করতে পারছি না। কারণ হলুদ ট্যাক্সিচালকরা তাঁদের মারধর করবেন। তাই শহরের অন্যতম ব্যস্ত জায়গাগুলিতে তাঁরা যান না। শেষপর্যন্ত দু'গুণ ভাড়া দিয়ে হলুদ ট্যাক্সিতে চড়তে বাধ্য হন বলে দাবি করেছেন ওই যুবক।
ওই যুবক কালীঘাট মন্দির নিয়েও উষ্মাপ্রকাশ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, 'আমি কালীঘাট মন্দিরে কয়েক হাজার টাকা খুইয়ে ফেলেছি। আমরা নিজেদের মতো করে এগিয়ে গেলেও ভিআইপি দর্শনের জন্য পান্ডারা ঘিরে ধরেছিলেন। ওঁরা দিব্য কয়েন, প্রসাদের মতো জিনিসপত্র বিক্রির চেষ্টা করছিলেন। এমনকী মন্দিরের ভিতরেও টাকা না দিলে পুরোহিতরা বিরক্ত হয়ে যান।'
‘দয়া করে বাস্তবটা সামনে আনবেন না’, কটাক্ষ এক নেটিজেনের
আর সেই পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে ৬৫ লাখ মানুষের কাছে সেই পোস্ট পৌঁছে গিয়েছে। এক নেটিজেন বলেন, 'দয়া করে বাস্তবটা সামনে আনবেন না। বাইরের লোকজন চমকে যাবেন। যদিও এখানকার লোকজনের সেইসব নিয়ে কোনও আপত্তি নেই।' অপর একজন বলেন, ‘ভাগ্যিস, আপনি এরকম ছবি পোস্ট করেছেন। আমি কলকাতায় যাব বলে ভেবেছিলাম। এখন পরিকল্পনা পালটে দিচ্ছি।’ তাতে ওই যুবক বলেছেন, ‘না, অবশ্যই কলকাতায় আসুন। তাহলে বুঝবেন যে আপনি যেখানে আছেন, সেখানে জীবন কতটা ভালো।’
রাজনৈতিক কারণে এমন পোস্ট, দাবি অনেকের
পালটা ওই যুবককে আক্রমণ শানিয়েছেন অনেকে। এক নেটিজেন বলেন, ‘যাঁরা কমেন্ট পড়ছেন, তাঁদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, এটা অ্যাকাউন্টটা আরআরএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ) চালায়। আর বাংলার বদনাম করার চেষ্টা করছেন। কারণ ওঁর প্রভুরা বাংলায় জিততে পারবেন না।’ একইসুরে অপর একজন বলেন, 'আপনি ইচ্ছা করে তুলনামূলকভাবে নোংরা জায়গায় গিয়েছেন। আর সেটা সব শহরেই আছে। আপনি যে পোস্ট করেছেন, তা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে কলকাতাকে এরকম বাজেভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।'
অপর এক নেটিজেন বলেছেন, ‘আমি কলকাতায় জন্মেছি। কলকাতায় ২৬ বছর ধরে আছি। কলকাতার একাধিক সমস্যা আছে। কিন্তু আপনি যেটা দেখিয়েছেন, তাতে পুরোপুরি পক্ষপাতিত্ব ধরা পড়েছে। অবশ্যই আমরা ভালো করতে পারি। কিন্তু দিল্লির পাহাড়গঞ্জ, বারাণসী, বেঙ্গালুরুর একাংশের অবস্থা এর থেকেও খারাপ।’ সেই মন্তব্যের প্রেক্ষিত অপর একজন বলেন, ‘ঠিকই বলেছেন। উনি একটা বাজারে গিয়ে মূল কলকাতায় ঘুরে গিয়েছেন বলছেন।’ এক নেটিজেন আবার কয়েকটি ছবি পোস্ট করে প্রশ্ন তুলেছেন যে বিজেপি-শাসিত রাজ্যের কী হাল এটা?